প্রীতি, প্রেম, মায়া এবং এসবের কারণে আনুকূল্য তো সর্বসম্মতিক্রমে ভাল একটি ব্যাপার। স্বজনের জন্য এ প্রীতি একটু বেশী থাকবে এটিও স্বাভাবিক, অর্থাৎ এটি প্রকৃতি প্রদত্ত একটি প্রবণতা। নিজের সন্তান, ভাই, বোন, মা এবং বাবা, অন্যদের বাবা, মা, ভাই, বোন এবং সন্তানের চাইতে একটু বেশি প্রীতি লাভ করবে, এটি সাধারণ ও স্বাভাবিক বিবেচনায় নিষ্কলঙ্ক। তবে, নিজের স্ত্রীর ক্ষেত্রে ব্যক্তিভেদে এর ব্যত্যয় বহুলশ্রুত একটি প্রবণতা; এটি আপাতত: রসিকতার রসে চুবিয়ে মূল কথায় আসি। একটি কথা প্রচলিত আছে, আর সেটি হলো, কোন এলাকার বাজারে গেলে মাছ বিক্রেতা যদি বলে যে, তার মাছ তাজা, সে এলাকার মাছ বাজারে মাঝে মাঝে পঁচা মাছ বিক্রি হয়, এটা নিশ্চিত। অর্থাৎ, স্বজনপ্রীতিটি যে সমাজে সংস্কৃতিতে পরিণত হয়, সেখানেই প্রীতিটিকে একপেশে করার ধারাটি উপস্থিত। স্বজনের জন্য প্রীতি থাকবে, তবে এর কারণে যদি বঞ্চনা নামক রাহু কাউকে গ্রাস করে, তাহলেই প্রীতির এ রূপটি কলুষিত হয়। সাধারণ সুবিধা ও তার ন্যায্য বন্টন, অর্থাৎ, যার যা লাভ করার কথা, তা না দিয়ে যদি বন্টনকারক স্বজনপ্রীতির কারণে স্বজনদের সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে সুবিধা প্রাপ্তিতে যাদের ন্যায়সংগত ভাবে অধিকার আছে, তাদের মধ্যে কেউ নিশ্চিতভাবেই বঞ্চিত হবে। এ প্রবণতা যদি সংস্কৃতি হয়, অর্থাৎ স্বজনপ্রীতি শব্দটি যদি বহুল উচ্চারিত হয় বা শব্দটি যদি বঞ্চনার কারণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে বঞ্চনায় সয়লাব হয় সর্বত্র। ফলাফল স্বরূপ দুর্বল হতে থাকে অবকাঠামো এবং বাড়তে থাকে বঞ্চিতদের সংখ্যা।
একটি কাজে উপযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ করা, তার যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করা এবং এর মাধ্যমে যোগ্যতাটি লাভে ব্যক্তিটিকে উৎসাহ প্রদানের সংস্কৃতিটি প্রতিষ্ঠিত করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। কাজ ভেদে যোগ্যতার মাপকাঠি বিশেষজ্ঞ মহল নির্ধারণ করবেন। নির্ধারিত মাপকাঠি অনুযায়ী যোগ্যতাটি অর্জনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রশিক্ষন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ যথাযথ ভূমিকা পালন করবে; অত:পর, নিয়োগদানকারী বিশেষজ্ঞ শ্রেনী বন্টনকারীর ভূমিকার মাধ্যমে যথার্থ বন্টনটি সম্পাদন করবে, এটিই হলো যথাযথ ধারা। এ ধারার প্রতিটি ধাপে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নিরপেক্ষ ভূমিকা একান্তই জরুরী। দেশপ্রেম ,জাতিয়তাবোধ, মনুষত্ব্যবোধ সর্বদাই বিভিন্ন গন্ডি বা পরিধিতে ন্যায়বিচারের পক্ষে।এখানে গন্ডি বা পরিধির প্রক্ষিতে প্রীতিসমূহ কিভাবে ভিন্ন ভাবে প্রয়োগ হবে তা বোধগম্যতার মধ্যে নিয়ে আসা জরুরী। পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রীতি, পারিবারিক গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা বাঞ্ছনীয় ; তেমনি দেশ, জাতি ও মনুষ্য সমাজের মানুষদের জন্য। পরিবারের বাইরে ব্যক্তির পরিচয় পারিবারিক সদস্য রূপে নয়; বরং বৃহত্তর পরিধির স্বাপেক্ষেই বিবেচনাধীন, যেমন- স্বদেশী বা স্বজাতি। উদাহরণ স্বরূপ, কারো ভাই, পারিবারিক পড়িমন্ডলে ও পারিবারিক অন্তক্রিয়ায়ই শুধুমাত্র ভাইয়ের প্রীতি পেতে পারে; ঘরের বাইরে নানাবিধ সুবিধা লাভের ব্যাপারে অন্যান্য দশটি মানুষের মত বিবেচনাধীন হবে। বৃষ্টির পানি, বিলের পানি, ঝিলের পানি, পুকুরের পানি ও নদীর পানি সর্বশেষে সমুদ্রে পতিত হলে, তা সমুদ্রের পানি হিসাবেই গন্য হয়; বিল-ঝিল-পুকুরের স্বাদু পানির প্রীতিতে আপ্লুত হয়ে পান করতে গেলে, পরিশেষে অপেয় লবনাক্ততাটি পানের ইচ্ছাটিকে বিষিয়ে তুলবে। অতএব, প্রীতিটিকে গন্ডি বা পরিধি সাপেক্ষে চর্চা করাই যথাযথ। উপমূল থেকে মূলে ফেরা যাক, সুবিধা সমূহ বন্টনের যথাযথ সিদ্ধান্তে বিশেষজ্ঞ মহলের বিচক্ষনতা, সুবিধাকাংখি ব্যক্তির উপযোগিতা যাচাইয়ে দক্ষতা ও প্রীতিহীন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ন্যায় বন্টনের মূল বৈশিষ্ট্য হিসাবে ধরা হয়।
স্বজনরা কারা? পারিবারিক সূত্র ছাড়াও স্বজনদের প্রকার ও বিস্তৃতি চতুর্দিকে উপস্থিত। স্বজনদের তালিকায় প্রধানতম হলো- রাজনৈতিক স্বজন; অর্থাৎ, যারা একই রাজনৈতিক আদর্শ, মতামত ও ধারনায় বিশ্বাসী, তারা। নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাদের প্রীতির বিস্তারে যার আর পর নাই এতটাই উদার যে, প্রীতির যাদুকরী ছোঁয়ায় সর্বজনরা মূহুর্তেই স্বজনে রূপান্তরিত হয়। এতে লাভ দুপক্ষেরই। প্রীতি প্রদানকারীরা স্বজনদের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে, তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে; অপর পক্ষে, স্বজনেরা প্রীতির মহিমায় অনাকাংখিত ও অপ্রাপ্য সুবিধা প্রাপ্তির তৃপ্তিতে প্রভুভক্ত কুকুরের মত পদলেহন করতে সদা জাগ্রত থাকে। তবে প্রীতিটি সবাই পাবে না। প্রীতিটি লাভ করার প্রধানতম শর্ত হলো আনুগত্য স্বীকার, এবং সেটা কথায় ও কাজে। যারা আনুগত্য স্বীকার করলো, তাদের একটি অংশ বঞ্চিতদের মধ্য থেকে, যারা আর বঞ্চনার বোঝা বহন করতে চায় না, এবং বাকি অংশটি যেটি বড় অংশ, তারা হলো অসৎ ও সুবিধাবাদীদের দল। বঞ্চিতদের যে অংশটি আদর্শ ও সততার কারনে আনুগত্য স্বীকার করলো না, তারাও একসময়ে অভাবে স্বভাব নষ্টের কারনে, পরিশেষে আনুগত্য স্বীকার করে। এরপর শুরু হয় অন্যরকম আর এক প্রতিযোগিতা, অার তা হলো- কে কত বেশী হিংস্র হতে পারে; কারন, সবাই যখন কুকুর, অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ও হিংস্র কুকুরগুলিকে, আধিপত্য বিস্তারটি চিরস্থায়ীভাবে নিশ্চিত করার জন্য, বেশী প্রীতি দেয়া হয়। স্বজনপ্রীতির কারনে, এভাবেই শুরু হয় হিংস্রতা আর আধিপত্য বিস্তারের মহোৎসব। ফলাফল স্বরূপ, যোগ্যতা অর্জনের টেষ্টা বা প্ররিশ্রম অপেক্ষাকৃত কঠিন বিধায়, দলীয় লেজুরবৃত্তি এবং চাটুকারিতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। দলীয়করনের এ জঘন্য সংস্কৃতি একবার স্থায়ীরূপ ধারন করলে, যার জোড় তারই মুল্লুক – এ পরিস্থিতির জন্ম হয়। আদিম সমাজের পাশবিক কর্মকান্ডের পুণ:প্রতিষ্ঠায় এবং মানুষের সহস্র বছরের সাধনা ও চেষ্টা যার মাধ্যমে অসভ্য সমাজের অভিশপ্ত জীবন থেকে উত্তোরন সম্ভব হয়েছিল, তার ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে আবারো অসভ্যতার সূচনা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রেনীটি আমার মতে একটি সমাজের অন্যান্য শ্রেনীগুলির তুলনায় সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাবক। এ শ্রেনীটি জাতির গুনগত মান প্রতিষ্ঠায় প্রধানতম ভূমিকাটি পালন করবে, এটাই স্বত:সিদ্ধ নিয়ম। স্বজনে রূপান্তরিত হয়ে, প্রীতি লাভের মধ্য দিয়ে, সুবিধা লাভের লালসায়, এ শ্রেনীটি যখন
দলীয় লেজুরবৃত্তির মত আর একটি ঘৃণ্য পেশায় সংযুক্ত হয়, জাতির মেরুদন্ড তখনই মরনব্যাধি রোগে আক্রান্ত হয়।
জনৈক একজন শিক্ষক, জনৈক কি অবগত আছেন কিংবা লালন করেন যে, মানুষ তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় দর্শনটি দান করা এবং পাশাপাশি নির্ধারিত ক্ষেত্রটিতে ছাত্রদের দক্ষ করে তোলা, শিক্ষক ভূমিকায় তার একমাত্র কাজ? রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারন, লালন, প্রকাশ ও তার চর্চা নাগরিক অধিকার, কিন্তু পদের জন্য, অর্থের জন্য বা স্বীকৃতি লাভের জন্য কারো পদ লেহন করার সংস্কৃতিটি শিক্ষক শ্রেনীর জন্য চরম লজ্জাজনক । সুবিধার জন্য স্বজন গন্য করা বা স্বজন হওয়া, অত:পর প্রীতির আদান-প্রদান যেন একটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। মাথা নষ্ট হলে বা মস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটলে, পাগলের খেতাব ছাড়া আর কি মিলতে পারে? অত:পর, জাতির মাথা সমতুল্য মানুষগুলি যদি পাগল হয়ে স্বজনপ্রীতির সংস্কৃতিতে নিজেদেরকে অন্তর্ভূক্ত করে, তাহলে দেহতুল্য সাধারন জনগোষ্ঠি মগের মুল্লুক মনে করে, যার যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। পরিনামে চুরি, ডাকাতি, লুট-পাট, খুন ও ধর্ষন পেশী শক্তির নিয়ন্ত্রনেই যাবে; অর্থাৎ, অপকর্ম করে ক্ষমতাশালী স্বজনের দারস্থ হলেই কেল্লা ফতে। এতে করে, ক্ষমতাহীন ও অসহায় শ্রেনীটি অন্যায়ের যাতাঁকলে নিষ্পেষিত হতে থাকে প্রতিনিয়ত। ভাল সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য থাকে অসহায় ও ক্ষমতাহীন মানুষগুলিকে রক্ষা করা। নিজেদের শিক্ষিত দাবী করে, নির্মল সমাজ প্রতিষ্ঠার দ্বায়িত্ব উপেক্ষা করে, স্বজনপ্রীতি নামক দুষ্টচক্রের সংস্কৃতিতে অবগাহন করে, এ বিশেষ শ্রনীটি কি একদমই লজ্জিত বোধ করেন না?
জনৈক রাজনৈতিক ব্যক্তি আমার আত্মীয় অথবা নিজদলীয় খুব কাছের মানুষ- এ উক্তিতে গর্বিত বোধ করার অন্তরালে নিজেকে ক্ষমতাশালী রূপে উপস্থাপনা কি এটিই প্রমান করে না যে, ব্যক্তকারী ব্যক্তিটি স্বজনপ্রীতি সংস্কৃতির একজন সক্রিয় ধারক ও বাহক? স্বকর্নে শ্রুত উক্তিটির মহিমায় আহলাদে উদ্ভাসিত হয়ে আমি কিংবা আপনি কি কখনো প্রচারকারীকেও ক্ষমতার প্রতাপে প্রতাপশালী করেন নি? তার প্রতি আনুগত্য ও ভীতির সন্মিলিত অসহায়ত্বের রূপটি প্রকাশ করেন নি? যদি আমরা করে থাকি, তাহলে আমরাও সে একই সংস্কৃতির বাহক। প্রশ্রয় দেয়ার এ প্রবনতাটি রোধ করার দ্বায়িত্বটি কার? কেউ একজন ক্ষমতাবান- এ কথাটির মর্মার্থ আসলে কি, কেউ কি ভেবে দেখেছেন? প্রাথমিক ও মূল ধারনা অনুযায়ী, ফল প্রদানের সক্ষমতাটি ক্ষমতাবান হওয়ার পূর্বশর্ত ; এর জন্য দক্ষতা অর্জন আবশ্যক। সুতরাং, ক্ষমতাবান হওয়া একপ্রকার প্রশংসনীয় যোগ্যতা যার মাধ্যমে একটি জাতি সফল হয়। ক্ষমতার প্রচলিত ধারনাটি হলো: প্রভাব প্রয়োগের মাধ্যমে, স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গত উপায়ে আপাত: অসম্ভব অর্জনটিকে
সম্ভব করা। প্রভাবটি প্রয়োগের ক্ষমতা কয়েকটি উপায়ে হতে পারে, তন্মধ্যে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, পেশীশক্তি, অর্থনৈতিক প্রাচুর্যতা উল্লেখ করার মত। এ সকল প্রভাব সাধারণত অন্যায় ভাবে কোন কিছুর অধিকার নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। অতএব, উল্লেখিত প্রভাব বিস্তারে সক্ষম ক্ষমতাবানরাই স্বজনপ্রীতি নামক অসুস্থ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।
স্বজনে পরিনত হওয়ার আর একটি প্রচলিত উপায় হলো, ক্ষমতাবান ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান করা। এই অর্থ প্রদানের মাধ্যমে স্বজনে পরিনত হওয়া, অত:পর, প্রয়োজনীয় সুবিধাটি লাভ করার বিষয়টি ঘুষ প্রথা নামে সর্বজনবিদিত।
এটি বর্তমানে এমনই একটি সংস্কৃতি, যা দৈনন্দিন অন্যান্য স্বাভাবিক কর্মকান্ডের মতই আর একটি কর্মকান্ড। প্রীতি প্রদানের এ সংস্কৃতির প্রভাবে মোট জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ আপাত ও ক্ষনকালের জন্য উপকৃত; কিন্তু, দিনশেষে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত । একটি উদাহরণ টানলে বিষয়টি পরিস্কার হবে: ধরুন, কোন একটি কোম্পানী তার প্রস্তুতকৃত একটি ভেজাল খাদ্য সামগ্রী বাজারজাতকরণনিমিত্তে ছাড়পত্র প্রদানকারী কর্মকর্তাকে ঘুষ প্রদান সাপেক্ষে বাজারজাত করার অনুমোদন পেল; এতে আপাত: সুবিধা পেল কর্মকর্তাটি এবং কোম্পানীটি, কিন্তু বাজার যেহেতু ভেজালে সয়লাব, তখন সাধারন মানুষ এবং কর্মকর্তা-কোম্পানী সংশ্লিষ্ট নির্বিশেষে সবাই দিনশেষে ভুক্তভোগী। এটি একটিমাত্র উদাহরণ ; এরূপ হাজারো উদাহরণ আছে, যেখানে কোনটিতেই অন্যায় ভাবে প্রীতি গ্রহিতা ও প্রীতি দাতা কোন পক্ষই বিজয়ী নয়। আপাত: সুবিধাটিই সাধারণত মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়; সুবিধাটির অন্তরালে যে সুদূরপ্রসারী একটি ক্ষতিকর ফলাফল থাকে তা কতজন মানুষ ভেবে দেখে? জীবন একটি ধারনা, জীবন একটি সংজ্ঞা; ধারনাটি ও সংজ্ঞাটি পূর্ণ জীবনকালের সর্বকর্মকান্ডের গুনগত মানের সন্মিলিত প্রভাবের উপরই বিচার্য। আবার, একটি মানুষের জীবন সব মানুষের জীবনের দ্বারা এবং সব মানুষের জীবন একটি মানুষের জীবন দ্বারা প্রভাবিত; অর্থাৎ, জীবনগুলি প্রতিটি প্রতিটির সাথে সংযুক্ত, যা একটি নির্দিষ্ট সমাজে একটি নিয়মের অধীনে সাম্যাবস্থায় বিরাজ করে। স্বজনপ্রীতির আধিক্যে নিয়মে ব্যাঘাত ঘটলে, সাম্যাবস্থাটি নষ্ট হয় এবং পরিনামে সবাই ভুক্তভোগী হয়।
আপনি একজন আদর্শ মানব কিংবা মানবী। আপনার জীবন দর্শন যথাযথ। জীবদ্দশায় কি উপায়ে জীবনের সম্পূর্ন ও নির্মল নির্যাসটি লাভ করা যায় তা আপনি অবগত। হাজার হাজার বছর ব্যাপ্তিকালে মহামানবতূল্য ব্যক্তিসকল বিভিন্ন ভাবে তাদের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি, দর্শন দিয়ে ন্যায়সংগত সুন্দরতম জীবনের প্রকৃতি ও ধারাটি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন। তাহলে কি কারনে এই সুন্দরতম জীবন লাভে প্রায় সকলেই বিচ্যুত ?
দায়িত্ব ও কর্তব্যের কিছু কিছু উপাদান আছে, যেমন: দেশপ্রেম, সেবা, সহযোগিতা ইত্যাদি যা আপাত: বিবেচনায়
বৃহত্তর জনগোষ্ঠির জন্যই মনে হয়; কিন্তু গভীর ভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, দিনশেষে এ সকল কর্তব্যের ফলাফলে ব্যক্তিটি নিজেই উপকৃত হয়। ওষুধের তিক্ততার প্রাথমিক উপলব্ধিটি খারাপ হলেও পরিশেষে তা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে, অপরদিকে মিষ্টান্নটি সুস্বাদু হলেও তা সুস্বাস্থ্যের পরিপন্থী হতে পারে। সুতরাং, স্বজনপ্রীতি বিবর্জিত ন্যায়বিচারের ফলাফলে আপাত ভাবে স্বজনেরা মর্মাহত হলেও পরিশেষে তা সকলের জন্যই মঙ্গলজনক।
একদল মানুষ আছে, যারা ভাবেন যে, এসব নীতির কথায় জীবন চলে না; উপরন্তু এও মনে করেন যে, কঠিন বাস্তবতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রীতির পরশ নিলে ক্ষতি কি? অধিকার গ্রহনের প্রতিটি ক্ষেত্র যখন প্রীতির আদান-প্রদানেই সংজ্ঞায়িত ও প্রতিষ্ঠিত, সেখানে প্রীতি প্রদানে অক্ষমরা ক্ষেত্রচ্যুত তথা অধিকার বঞ্চিত। এমতাবস্থায় নিছক ভালো মানুষটিও অধিকার আদায়ে প্রীতির বহুরূপ ব্যবহারে সচেষ্ট হবেন, এটিই স্বাভাবিক । নেতা, কর্মকর্তা ও প্রধান তাদের উপরই যেহেতু নিয়ন্ত্রন, সেহেতু তাদের নীতিগত আদর্শটিই পারে এই স্বাভাবিক রূপের অস্বাভাবিক সংস্কৃতিটির পতন ঘটাতে। নীতিহীন কর্ণধারদের সামাজিক ভাবে ঘৃনার সংস্কৃতি, এ পরিস্থিতি হতে উত্তরণের একটি অন্যতম উপায়। সামাজিক অমানুষদের যেমন, আত্মীয়, বন্ধু বা প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা নীতিবিবর্জিত, তাদের প্রতি ভুল প্রশংসা ও তাদের অন্যায়কে অস্বীকৃতি না জানানোর সংস্কৃতিটি তাদেরকে তাদের নীতিহীনভাবে বর্ধনে সহায়তা করে। নিজ সন্তানের অন্যায় কর্মটিকে প্রশ্রয় দেয়া মানে সন্তানটিকে অন্যায় করতে প্ররোচিত করা, এটি বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা না।
দীন মোহাম্মদ মনির
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।