লতা মঙ্গেশকর আর নেই। ঘুম ভাঙতেই শুনলাম এ খবর। সত্যি বলছি ভেবেছিলাম খবরটা ভুল। বিশ্বাস করতে পারিনি এমন নয়… নেই শব্দটা ওঁনার ক্ষেত্রে যেন প্রযোজ্য হতেই পারে না। কি যেন এক অদ্ভুত আবেগ। লতাজী’র কর্মকান্ড, উপাধি সবকিছুই আকাশস্পর্শী, সকলেই জানেন। প্রশান্তিকা’র সম্পাদক দাদা যখন লিখতে বললেন তখন মনে হলো রথের সময় জগন্নাথ দেবের রথের গাড়ীর দড়িতে একচিলতে হাত রাখার সুযোগ যেন পেলাম। এক অনন্ত, অসীম, প্রকাণ্ড, গভীর কিছুকে আরো একবার শব্দ দিয়ে আস্বাদন করার সুযোগ যেন এল। সুরের সম্রাজ্ঞী তিনি। বীণাপাণির বিসর্জনের ঠিক আগেই বিসর্জন হলো রক্তমাংসের সরস্বতীর।
লতাজী’র গান নিয়ে বলব আমি? না, এমন সাহস কোনদিন হবে না তবে ওঁনার গান যখন আমি শুনেছি তখন আবেগের বিভিন্নতা আমাকে যেভাবে ছুঁয়ে গেছে তার একটা ছোট্ট ছবি আঁকতে পারি।
তখন আমার ১৭ বছর বয়েস। ‘রং দে বাসন্তী’ চলচ্চিত্রটি সদ্য মুক্তি পেয়েছে। ‘লুকা ছুপি’ গানটায় মগ্ন হয়ে রয়েছি। আমি হিন্দি প্রায় বুঝিনা বললেই চলে। তাই শুধু সুর আর গায়কী দিয়েই গানটা আমার মধ্যে প্রবেশ করেছিল। গানটা শোনার আগে সিনেমাটা আমি দেখিনি। জানি যা বলব তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না তবু তা আমার অভিজ্ঞতায় তো সত্যি। গানটা বারবার শুনতে শুনতে এক দৃশ্যকল্প তৈরি হয়েছিল মনে। পরে যখন সিনেমাটা দেখলাম তখন প্রায় মিলে গিয়েছিল সেই দৃশ্যটি। অথচ অত্যুক্তি না করে আগেই বলেছি আমি কিন্তু হিন্দি ভাষা বুঝিনা।
এই হলেন আমার কাছে লতা মঙ্গেশকরের গান। একজন অবাঙালী যে এরকম স্পষ্ট শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে তাও আবার রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারেন তার একমাত্র নিদর্শন লতাজী বললেও অত্যুক্তি হবে না।
সাধনা কী? উত্তর অনেক কিছুই হতে পারে। তবে যে নামটা উত্তর হিসেবে লিখলে স্হান, জাতি, দেশ, কাল, ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই সাধন-ভাবের একটা গন্ধ পাবেন তা হলো লতা মঙ্গেশকর।
আপনাকে চাক্ষুষ করিনি লতাজী, আপনার পা ছোঁয়ার সুযোগ পাইনি। আজ বলছি আপনাকে আমরা কেউ ছাড়ছিনা, ছাড়তে পারছি না। সমাজের সব স্তরের মানুষ আজ একসঙ্গে আপনার গান শুনছি। আমরা তৃতীয় বিশ্বের মানুষ, গরীব দেশ… তবু বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করেই থাকি কারণ আমাদের একজন লতা মঙ্গেশকর আছেন, একজন আস্ত লতা মঙ্গেশকর। দেবী, তোমারে সেলাম।
অঙ্গনা চট্টোপাধ্যায়
সঙ্গীত শিল্পী, কলকাতা।