লাকেম্বায় নির্মিত হবে মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ

  
    

প্রশান্তিকা ডেস্ক: একুশ মানে মাথা নত না করা, ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের এই ত্যাগ ও আত্মমর্যাদাবোধকে স্বীকৃতি দিয়েছে খোদ

প্রস্তাবিত নকশা।

ইউনেস্কো। কানাডার সালাম-রফিকদের হাত ধরে নিজ নিজ ভাষা সংরক্ষণের আন্দোলনকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রবাসী বাঙ্গালীরা। তারই হাত ধরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বাঙ্গালী পাড়া বলে খ্যাত লাকেম্বায় অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি গ্রহন করেছে কেন্টারবুরী-ব্যাঙ্কসটাউন সিটি কাউন্সিল। সমগ্র বাংলাভাষা-ভাষীদের পক্ষ থেকে সিডনির সমস্ত ভাষা-ভাষীদের তাদের মাতৃভাষার সাথে সংযোগ ঘটাতে সিটি কাউন্সিলের বাঙ্গালী অরিজিন কাউন্সিলর নাজমুল হুদা, অপর কাউন্সিলর শাহে জামান টিটো, মুনীর হোসেইন-এর এই উদ্যোগের সাথে আরো ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান শামীম, লিঙ্কন শফিকুল্লাহ। গত ২৮শে জুলাই সিডনির লাকেম্বায় এই ঐতিহাসিক মুহুর্তটি প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করে সারা অস্ট্রেলিয়া তথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সবাই একত্রিত হয়েছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে কনসেপ্ট পেপার তুলে ধরেন বাংলা হাব’এর মুনীর হোসেইন, কাউন্সিলের কাজ ও এই প্রজেক্টের কথা তুলে ধরেন কাউন্সিলর নাজমুল হুদা, আমাদের করনীয় ও এর সাথে বাংলাদেশী কম্যুনিটির সম্পর্ক তুলে ধরেন কাউন্সিলর শাহে জামান টিটো, সহযোগিতার ব্যাপ্তি তুলে ধরেন লিঙ্কন শফিকুল্লাহ এবং সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন মুক্তমঞ্চের সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীম।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক ও বাংলা ভাষায় যারা বহুদিন সিডনিতে কাজ করছেন তাদের মতামত ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়। সম্মেলন এই মহতী উদ্যোগের সাথে সবাইকে জড়িত হওয়ার আহবান জানানো হয় এবং উপস্থিত প্রত্যেকেই এই উদ্যোগের সাথে মনে-প্রাণে একসাথে থাকার অঙ্গীকার করেন।  সিডনির বাঙালিপাড়া খ্যাত লাকেম্বার পিল পার্কে এ স্মৃতিসৌধ নির্মিত হবে। মুলত সিডনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সিডনির ক্যান্টারব্যারি ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে এই স্মৃতিসৌধের নির্মাণকাজ শুরু হবে, ইতিমধ্যেই একটি ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলা হয়েছে কাউন্সিলরের অধীনে। অর্থ সংগ্রহ ও এর সাথে অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ নিয়ে আগামী ১৮ই আগস্ট একটি কম্যুনিটি বার-বি-কিউ মিটিং-এর আয়োজন করা হয়েছে স্মৃতিসৌধের প্রস্তাবিত স্থান পিল পার্কে, বেলা ১২টায়। এ ছাড়া যে কেউ কাউন্সিলের কাছে অনুদান পাঠাতে পারবেন। স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার। ক্যান্টারব্যারি ব্যাংকসটাউন সিটি কাউন্সিল ও দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় এই অর্থ সংগ্রহ করা হবে।

পার্থ প্রতীম বালা’র অনবদ্য ডিজাইনে সকল ভাষাভাষীর সম্মানে এই স্মৃতিসৌধে ফুটে উঠেছে বহুজাতিকতা, আত্মনির্ভরতা আর একুশের চেতনায় লালিত ইউনেস্কোর স্বীকৃতি। স্মৃতিসৌধটির প্রাথমিক নকশাটি চুড়ান্ত করা হয়েছে। নকশায় একটি বেদি থেকে দুটি হাতের ওপর পৃথিবীকে তুলে ধরে রাখা—এমন একটি কাঠামো রয়েছে। পৃথিবীর নকশাটিতে বাংলা ভাষার অক্ষরসহ বিভিন্ন ভাষার অক্ষর রয়েছে। স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ও প্রস্থ হবে ২৮ ফুট করে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৬ সালে সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কে একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়।
ইতিমধ্যেই এই অনবদ্য সফলতায় গা’ ভাসিয়েছেন প্রবাসী বাঙ্গালীরা, আনন্দে উদ্বেল প্রবাসীরা অপেক্ষা করছেন ইতিহাস তৈরীর এই আয়োজনে শরীক হওয়ার জন্য, এর জন্য তারা কাউন্সিলের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, এবং বলছেন, বহুজাতিক সমাজে এটি আমাদের বাঙ্গালীদের অন্যতম সফলতা ও স্বীকৃতি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments