লাকেম্বায় পহেলা বৈশাখে রোববার দিনভর বৈশাখী উৎসব

  
    

আরিফুর রহমান: পুরাতনের বিদায়ের পরেই আসে নতুনের বৈশাখ। বৈশাখ আসে ঝড় নিয়ে, বিদায় হয় ধ্বংসের সহযাত্রী হয়ে। বৈশাখ সাহসী, ক্ষ্যাপা, বৈরী , অশান্ত, অসীম, মারমুখো, নির্দয়। কিন্তু তার সৃজনক্ষমতা শিল্পীর সুনিপুণ সৌকর্যকে হার মানায়। প্রেমিকের অন্তর সাধনায় বিশ্বাস ও প্রেমের মাত্রাযোগ ঘটায় এ বৈশাখ। চৈত্রের দাবদাহে জীবন যখন মরুপ্রায়, রোদে পুড়ে কাদামাটি ঠনঠনে, তখনি বৈশাখ আনে ঝড়, সাথে পানির ফোয়ারা, বিজলীর ছোড়া পুঞ্জিভূত শিলা থেকে ঘূর্ণীর শঠতা। বৈশাখের অস্তিত্ব আমাদের হৃদয়ে গ্রথিত। সমগ্র অস্তিত্বে বৈশাখ প্রভাব ফেলে। এ প্রভাব থেকে সমাজের কোন স্তরই বাদ পড়ে না। তাই তো কবি-সাহিত্যিকরা বৈশাখ বিষয়ে নানান কবিতা-গল্প -গান লিখে গিয়েছেন।আমাদের কবিতায় ঋতুভিত্তিক রচনার প্রসঙ্গে আলোচনা করতে চাইলে অনিবার্যভাবেই সবার আগে উচ্চারণ করতে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। বাংলার প্রতিটি ঋতু প্রতিটি মাসের কথা রবীন্দ্রনাথ এতটাই বিন্যস্তভাবে উপস্থাপন করেছেন যে ভাবলে অবাক হতে হয়। বাঙালির মানসপটে রবীন্দ্রনাথের বৈশাখ যেভাবে গেঁথে আছে তার কি কোনো বিকল্প হতে পারে? শামসুর রাহমানের একটি কবিতা আমাদের নিজের সঙ্গে প্রায় মিলে যায়। শামসুর রাহমান লিখেছেন, ‘আমার মাকে আমি কোনোদিন গান গাইতে শুনিনি’ কথাটি আমাদের জীবনেও প্রায় সত্য, ব্যতিক্রম কেবল চৈত্রসঙক্রান্তির দিন। শিশুকাল থেকে দেখেছি চৈত্রসঙক্রান্তির দিন বাড়ির উঠোন-অঙ্গিনা ঘর-দোর পরিস্কার করতে করতে মা গাইছেন–
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষূরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক
এসো এসো ॥
এসো হে বৈশাখ এসো এসো
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক ॥
মুছে য্কা গ্লানি ঘুচে যাক জরা
অগ্নিস্নানে শূচি হোক ধরা……

রবীন্দ্রনাথের এ গান বাঙালির জীবনে অনিবার্য গান হয়ে আছে, একইভাবে তাঁর অজস্র গান-কবিতা বাঙালির জীবনের নানান উৎসব-আচার-অনুষ্ঠান আনন্দ-বেদনায় অনিবার্য হয়ে মিশে থাকে।

বৈশাখ নিয়ে বাংলাদেশের অনেক কবিই কবিতা লিখেছেন, সে অর্থে বাঙালির মানসে বৈশাখের সাথে প্রেম একাকার হয়ে থাকে। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঝরা পাতার কান্না-বিবর্ণ সময়ের চিত্রকল্পের সাক্ষাৎ পেয়ে যাই সহজেই। নির্মলেন্দু গুণ লিখেন ‘চৈত্রের ভালোবাসা’। বৈশাখ প্রেমের মাস না হলেও বৈশাখ পুরাতন স্মৃতি-জরা-গ্লানি পেছনে ফেলে নতুনকে-সবুজকে আবাহনের কাল, বৈশাখ নতুনের সাথে হাত ধরে চলার প্রেরণা, বৈশাখ সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়ার আকাঙ্খা-স্বপ্ন ছোঁবার স্পর্ধার কাল। আমাদের স্বপ্ন ছোঁবার আকাঙ্খা উজ্জীবিত রাখতেই সৈয়দ শামসুল হক রচনা করেন ‘বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা’। বৈশাখ স্বপ্নের কথা-আশার কথা উচ্চারণ করে”।

সেই বৈশাখ কে উৎযাপন করতে বাঙালী কখনও কোনদিন কার্পন্য করেনা।দল বেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে সমবেত হয় রমনার বটমূলে।লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি মুখোরিত হয় পুরো রমনার চত্বর ।ছায়ানটের গানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গায় হাজার হাজার মানুষ।এছাড়া সারা রাস্তা জুড়ে বিভিন্ন রকমের আল্পনায় ভরে ওঠে।মঙ্গল শোভ যাত্রা বের হয় মানুষের মঙ্গলার্থে।

বাঙ্গালীরা প্রশান্ত পাড়ে এসেও ভুলতে পারেনি তাদের প্রাণের পহেলা বৈশাখ কে।সেই জন্য আগামী ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে রমনা ও টি এস সির আদলে সিডনি বসবাসরত বাঙ্গালীরা এবার বাংলা টাউন ইনক নামে খ্যাত লাকেম্বা এলাকাতে উদযাপন করতে যাচ্ছে বৈশাখী উৎসব।আয়োজকেরা এর নাম দিয়েছেন শাপলা সিটি বৈশাখী উৎসব। যেখানে শুধু মাত্র কয়েকটা গান কবিতা বলেই শেষ হবেনা।পুরো এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে বৈশাখের আলপনা করা হবে এবং পান্তা ভাতের আয়োজন তো থাকছেই।এসব ব্যাপারে বৈশাখের উৎসবের অন্যতম আয়োজক রেইন ফরেস্ট ফিউশন রেঁস্তোরার কর্নধার মিরাজ হোসেন ও গ্রামীন চটপটির আশরাফ সাহেবের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ভোরের মঙ্গল শোভা যাত্রা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবধি অনুষ্ঠান চলবে।গান, কবিতা, বিভিন্ন ধরনের লোকগাঁথা দিয়ে অনুষ্ঠান টি সাজানো থাকবে।মিরাজ হোসেন আরো বলেন, তার রেস্টুরেন্ট রেইন ফরেস্ট ফিউশন ছাড়াও প্রায় সকল রেস্টুরেন্টে পান্তা ইলিশসহ বাঙ্গালী খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। গতবছরের মতো এবারও থাকছে কুটির শিল্প পণ্যের বিপনী বিতান। অন্তত: এই উৎসবে বাঙ্গালীর বৈশাখ উৎসবের সব উপকরণের দেখা মিলবে।
সুতরাং দিনভর আসুন মিলি নতুন বছরের আগমনী উৎসবে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments