প্রশান্তিকা রিপোর্ট: বাংলা আর্ট এক্সিবিশনের এবারের পরিবেশনা লিখন পারফর্মিং আর্ট। ৯ ফেব্রুয়ারী শনিবার সন্ধ্যায় ব্যাংকসটাউন আর্ট সেন্টারে এই লিখন পারফর্মিং আর্ট শুরু হবে। আয়োজক বাংলা হাবের কর্ণধার মুনীর বিশ্বাস প্রশান্তিকাকে বলেন, বাংলা আর্ট সিডনিতে প্রতি বছর দু’দুবার আর্ট এক্সিবিশন করলেও এবারই প্রথম গান, লোকগান, কবিতা, নৃত্য ও মুনীর বিশ্বাস রচিত মঙ্গল সর্দারের লাঠিখেলা সহ নানা আয়োজনে সাজানো হয়েছে এই লোক উৎসব। মুনীর বিশ্বাস জানান, এই উৎসবে যাদের পরিবেশনা থাকছে তারা হলেন কাব্য কথন, মুনীর বিশ্বাস, সাবরিনা ফারুকী উশ্রী, তাসফিয়া শফিক ঈশিকা, মারিয়া মাহনুন, নুশাবা রহমান, মাসুদ পারভেজ, তাম্মি পারভেজ, পূরবী পারমিতা বোস, ইয়াসির পারভেজ মিহির, নোরা পারভেজ, জোনাক বিশ্বাস, লিঙ্কন শফিকুল্লাহ, খুরশিদ রেজা ইবনে রহমান, অর্পিতা সোম ও তার দল, ঈশান বিশ্বাস, সাফিনা জামান, নীলাদ্রি চক্রবর্তী, সাকিনা আক্তার, শুভ আহসান খান, তানিম হায়াত খান রাজিত ও শুভ্রা মুস্তারিন। নীচে কয়েকজন শিল্পী ও দলের কথা তুলে ধরা হলো।
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলা সংস্কৃতি ও কবিতার অন্যতম দল কাব্য কথন এই উৎসবে বিশেষ পরিবেশনা করবে। কাব্য কথনের প্রধান শ্রাবণী পাল পুরকায়স্থ ছাড়াও গান ও বৃন্দ আবৃত্তি করবেন সাদিয়া আফরিন, বুশরা খানম, রাজিব পাল, শামসুদ্দিন শফি।
পূরবী পারমিতা বোস
সিডনি প্রবাসি জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী পূরবী পারমিতা বোস নৃত্য পরিবেশন করবেন। পুরবী ৫ বছর বয়স থেকে ধ্রুপদী নাচ শেখা শুরু করেন। সর্বশেষে তিনি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠিতে ছিলেন। প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী শ্রী যোগেশ চন্দ্র দাসের কাছেও তিনি নাচের তালিম নেন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী শামীম আর নীপা ও শিবলি মোহাম্মদের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন। দেশে বিদেশে অসংখ্য পুরষ্কার জয়ী পুরবী সিডনিতে গত পাঁচ বছর ধরে নৃত্য পরিবেশন করে আসছেন। অনুষ্ঠানে আরও নৃত্য পরিবেশন করবেন অর্পিতা সোম।
তানিম হায়াত খান রাজিত। একজন সরোদ শিল্পী, কম্পোজার এবং গায়ক।
তানিম হায়াত খানের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি বিশ্ব বরেণ্য সংগীত ঘরানা সেনিয়া মাইহার ঘরানার একজন সদস্য। পারিবারিকভাবে এই পরিবারে ৪/৫ বছর বয়স থেকে বাদ্য যন্ত্র তুলে দেয়া হলেও তানিমের সরোদের শুরু বেশ দেরিতে – ২২ বছর বয়সে। সেই শেখার মাঝেও একটা বিরাট ছেদ পড়ে যখন তানিম স্থায়ী ভাবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে চলে আসেন। তারপরেও এই স্বল্প সময়েই তানিম নিজেকে একজন উদীয়মান সরোদ শিল্পী হিসাবে পরিচিত করে তুলেন।
তানিম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্ব বিখ্যাত সন্তান উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের ছোট ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেক উপমহাদেশ খ্যাত সুরবাহার শিল্পী উস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সাহেবের পৌত্র। তানিম সংগীত বিশেষজ্ঞ মোবারক হোসেন খান আর ৬০ এর দশকের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ফওজিয়া ইয়াসমিনের কনিষ্ঠ সন্তান।
তানিম ১৯৯৮ সালে সরোদ হাতে তুলে নেন। ওনার সরোদে হাতে খড়ি ওনার চাচাতো ভাই উপমহাদেশখ্যাত সরোদিয়া উস্তাদ শাহাদত হোসেন খান এর কাছে। সিডনী তে তানিম একজন ব্যস্ত সরোদ শিল্পী এবং সংগীত শিল্পী। সিডনীতে বসবাসরত দুই বাংলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ওনার অবাধ যাতায়াত। ২০১৮ গোল্ডকোস্ট কমনওয়েলথ গেমসের একসট্যাটিক্ট কনসার্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তানিম সরোদ বাজিয়ে। সরোদ এর পাশাপাশি তানিম একজন মিউজিক কম্পোজার ও সংগীত শিল্পী। এ উৎসবে তানিমের অংশগ্রহণ নি:সন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি দর্শকদের জন্য।

মাসুদ ও তাম্মি পারভেজ
সিডনি প্রবাসী জুটি মাসুদ পারভেজ এবং তাম্মি পারভেজ পরিবেশন করবেন লোকউৎসবে। মাসুদের ছোটোবেলা থেকেই ছবি আঁকা ও ডিজাইন এর প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিলো। আর তাম্মি নৃত্যকলা পরিবেশনায় বেশ পারদর্শী।
দুজনেরই আবার কবিতা লেখা ও আবৃত্তির প্রতি অনেক ঝোঁক। তারা এপর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একক এবং দ্বৈত আবৃত্তি পরিবেশন করেছেন। এবারের বাংলা আর্ট এক্সিবিশনে তাদের স্বরোচিত একটি দ্বৈত বাংলা আবৃত্তি পরিবেশনা থাকবে।
সাকিনা আক্তার সিডনির সুপরিচিত মুখ। তিনি সঙ্গীতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন সিদ্ধহস্ত তেমনি চিত্রকলাতেও সমান পারদর্শী। ছায়ানটে গান শেখার পাশাপাশি তিনি তবলাতেও তালিম নিয়েছেন। সিডনির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি তবলায় সঙ্গত করে সুনাম অর্জন করেছেন। বাংলা আর্ট এক্সিবিশনে তিনি নিয়মিত তাঁর শিল্পকর্ম বিশেষ করে সূচীশিল্প প্রদর্শন করে আসছেন। উৎসবে তিনিও অংশ নেবেন।
শুভ্রা মুস্তারিন সংস্কৃতি কর্মী ও শিল্পী। তিনিও সিডনির বিভিন্ন মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করে জনপ্রিয় হয়েছেন। সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি উস্তাদ মধুসূদন শাখারীর হাতে। পরবর্তীতে তিনি ছায়ানটে রবীন্দ্রসঙ্গীতে শিক্ষালাভ করেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত ছাড়াও বিভিন্ন বাংলা গানে শুভ্রা সিদ্ধহস্ত। তিনি সিডনিতে ১৮ বছর ধরে গান গেয়ে আসছেন। তাঁর প্রথম একক এলবামের নাম গাহন। শুভ্রা মুস্তারিনও গান গাইবেন বাংলা উৎসবে।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ৫ অলিম্পিক প্যারেড, ব্যাংকসটাউনের আর্ট সেন্টারে বাংলা আর্ট লোকউৎসবে বিপুল দর্শক সমাগম হবে বলে আয়োজকেরা আশা করছেন।