রাফসান রোহান: বর্তমানে বিনোদন জগতের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এবং শর্ট ফ্লিম। যুগ বদলের তাড়নায় এসকল বিভাগেও পরিবর্তন লক্ষণীয়।
একটি সিনেমা, ওয়েব সিরিজ কিংবা শর্ট ফ্লিমের মধ্যে নিত্যদিনের গল্পগুলোকে তুলে ধরা হয়। নানান চরিত্র, সংলাপ এবং দৃশ্যেরা এসে ভিড় জমায়। দক্ষ হাতের সম্পাদনায়, নান্দনিক রং বিন্যাসে দারুন একটি গল্প ফুটিয়ে তোলা যায়। তবে কেমন লাগবে যদি সেই গল্পগুলোর অভিব্যক্তি অনুসারে কোনো শব্দসমষ্টি না থাকে! বিষয়টা ভাবতেই বিদঘুটে লাগছে, তাই না? বর্তমানে গল্পের অভিব্যক্তি অনুসারে শব্দসমষ্টিগুলো নিয়ে বেশ নিখুঁত ভাবে কাজ করতে দেখা যায়। কারণ সেই অভিব্যক্তি অনুসারে শব্দসমষ্টিগুলো একটি গল্পের প্রাণ বিন্দু। এসব নিয়েই বিশদভাবে কাজ করে আসছেন অভিজ্ঞ সাউন্ড ডিজাইনার রাজেশ কুমার সাহা। সাউন্ড ডিজাইন বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য সাউন্ড ট্র্যাক তৈরি করার শিল্প এবং অনুশীলন। রাজেশের দক্ষ হাতে তৈরিকৃত সেসকল ট্র্যাক প্রাণবন্ত করে তুলছে গল্পগুলোকে। নানা সময় নানান কৌশল খাটানোর পর ট্র্যাকগুলো পেকে-ওঠে তাঁর হাত ধরে।
রাজেশ কুমার সাহা বর্তমানে যুক্ত আছেন সাউন্ড মিক্সিং এক্সপার্ট হিসেবে স্টুডিও কাউবেল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে। সেখান থেকে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে বেশ কিছু সুনামধর্মী প্রজেক্টে। ইতিমধ্যে কাজ করেছেন কাইজার, প্রজন্ম টকিজ, তাকদীর, ঊনলৌকিক, শাটিকাপ, দ্য লাস্ট পোস্ট অফিস, শনিবার বিকেলে, হাওয়াসহ আরো বেশ কিছু বিজ্ঞাপন, শর্টফিল্ম, নাটক, ফিচার ফিল্ম এবং গেমসের সাউন্ড ডিজাইন প্রজেক্টে।
‘ঘুম থেকে উঠেই শোনা যেতো বাবা-মায়ের ঘর থেকে ক্যাসেট প্লেয়ারে গান ভেসে আসছে, এরকম এক পরিবারে বেড়ে উঠেছি।’ এমন এক গল্প জানিয়েছেন তিনি। ক্যাসেট ওয়াকম্যান ছিলো তাঁর ছোটো বেলার সর্বত্র সঙ্গী। বন্ধুদের সাথে গান বাজনা করতে করতে সাউন্ডের প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে সাউন্ড ডিজাইনের দিকে ঝুঁকতে থাকেন রাজেশ। বাবা-মায়ের সম্মতিতে ব্র্যাক ইউভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে মুম্বাইতে চলে যান। সেখানে AAT Academy থেকে সাউন্ড নিয়ে পড়া শেষ করে আবারো দেশে ফিরে এসে কাজে লেগে পড়েন তিনি। সাউন্ড ডিজাইন নিয়ে যাত্রা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে পড়া অবস্থাতেই শুরু হয়েছিলো। পড়া শেষের দিকে বন্ধুদের জন্য সাউন্ডের ছোটখাটো কাজ করে দিতেন। বলার মতো উল্লেখযোগ্য একটি কাজ হচ্ছে আদনান এম.এস. ফকিরের ডকুমেন্টরি ফিল্ম ‘ফাইন্ডিং বাংলাদেশ পার্ট টু’। সেই কাজটা করা অবস্থা়তে মুম্বাইতে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন সৃজনশীল সাউন্ড ডিজাইনার রাজেশ কুমার সাহা।
অত:পর দেশে এসে সাউন্ডবক্স স্টুডিও-তে যোগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই সাউন্ড নিয়ে আবারো নতুন করে দক্ষ হাতে কাজ শুরু হলো তাঁর। প্রথম কাজটি ছিলো ফেইসক্যার্ড প্রোডাকশনস থেকে মেজবাউর রহমান সুমনের পরিচালনায় গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপন। তবে তাঁর পাকা হাতের কাজের জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করেছে শাওকি-অনিমদের ফিল্ম নৈর এর একটি কাজ প্রজন্ম টকিজের মাধ্যমে। এরপর থেকে আর তাঁকে পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি। প্রতিটা নতুন কাজেই তিনি পূর্বের কাজটিকে ছাপিয়ে যেতে লাগলেন। ২০২১ সালের দিকে তিনি স্টুডিও কাউবেলে জয়েন করেছেন। সেখান থেকে জীবনের আরো একবার মোড় ঘুরেছে তাঁর। অভিজ্ঞতা এবং নতুনত্ব সব মিলিয়ে, নিজের পাকা হাতের বেশ কিছু কাজের মধ্য দিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি অল্প সময়ের ব্যবধানে।
ছোটবেলাতে কোথায় যেনো একটি লেখা তাঁর চোখে পড়েছিলো, ‘এমন কিছুকে প্রফেশন হিসেবে বেছে নাও। যা তুমি ভালোবাসো। তবেই সারাজীবন আর কাজকে কাজ মনে করে কষ্ট পাবে না।’ ‘যেটা তুমি ভালো পারো সেটা করতে কখনোই সস্তায় নিজেকে বিক্রি করে দিবে না।’ যা তাঁর জীবনের মুখ্য অনুপ্রেরণা হিসেবে সাহায্য করেছে। তাইতো পরিবারের সহায়তায় এবং সেই ছোটবেলার অনুপ্রেরণামূলক দুটি বাক্য ধারণ করে নিজের ভালোবাসার পেশায় নিজেকে আজ উজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছেন রাজেশ কুমার সাহা। তাঁর জীবন চক্র থেকে আরো একটি অনুপ্রেরণামূলক বাক্য ভেসে আসতে দেখা যায়। তা হচ্ছে লাওন কিং সিনেমার একটা ডায়লগ, ‘হাকুনা মাতাটা। যার অর্থ হলো, কোন চিন্তা করো না।’
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় হলো, শেষ বয়সে নিজের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থেকে নতুনদের মধ্যে বিগত দিনগুলোয় অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দিবেন তিনি। সকলের জন্য তাঁর একটি উপদেশ বার্তা, ‘যা করতে ভালোবাসেন সেটা যদি অন্যের ক্ষতির কারণ না হয় তাহলে সেটা কখনোই ছেড়ে দিবেন না। এসবই দিন শেষে আপনাকে জীবনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
That’s a great story behind a BIG SCREEN…