শহীদ বুদ্ধিজীবিদের আত্মত্যাগ ও অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হোক নতুন প্রজন্ম-আতিকুর রহমান শুভ

  
    

১৯৭১। ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এদেশীয় দোসর আল বদর, আল শামস, রাজাকারদের সহযোগিতায় হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। তারা বেছে নেয় আমাদের সূর্য সন্তানদের, তাঁরাই যাদের অণুপ্রেরণা আর উদ্দীপনায় দেশ এগিয়ে চলছিলো, আমরা একটি স্বাধীন দেশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলাম। ঘাতকেরা মনে করেছিলো তাঁদের নি:শেষ করতে পারলে বাংলাদেশ নামক দেশটা আর কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা।

আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বয়স প্রায় অর্ধ শতকে পদার্পণ করছে। এখনো নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে প্রবাস প্রজন্ম জানেনা শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস কি, ভাষা শহীদ দিবস কি এমনকি বিভিন্ন উৎসবে উপস্থাপকের হঠাৎ প্রশ্নে প্রবাস প্রজন্ম স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস কি তাও গুলিয়ে ফেলে। আজ ১৪ই ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টুকুতেই পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী পরিকল্পিতভাবে আমাদের মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের হত্যা করে। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে ওরা যখন বুঝতে শুরু করে যে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দূর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। সেই অনুযায়ী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামসের সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ গৃহ থেকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। এই পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। কিন্তু এটা শুরু হয়েছিলো সেই ২৫ মার্চের কালো রাত থেকেই। শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এমনকি যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশেও ঘাতকদের হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকে। নন্দিত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান তাঁর নিখোঁজ ভাই শহিদুল্লাহ কায়সার যিনি স্বাধীনতার আগে আল বদর বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছিলেন, খুঁজতে খুঁজতে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারী নিজেই নিখোঁজ হয়ে পড়েন। ঘাতকেরা তাঁকেও বাঁচতে দেয়নি। প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেদিন মীরপুরে বিহারীরা ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হন।

মেহেরপুর: ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের উপর নির্মিত ভাস্কর্য

আমাদেরকে সোনার বাংলা উপহার দিয়ে সারা দেশব্যাপী শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক, বিজ্ঞানী, সাংস্কৃতিক কর্মী সহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবি ঘাতকের আঘাতে প্রাণ হারান। আমরা স্মরণ করি মুনীর চৌধুরী, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, শরীদুল্লাহ কায়সার, ডাক্তার আলীম চৌধুরী, জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ, যোগেশ চন্দ্র ঘোষ, কবি মেহেরুন্নেসা, সিরাজুদ্দিন হোসেন প্রমুখদের। আমাদের বড় লজ্জা এদেশীয় সেই দোসররা এখনও তৎপর পাকিদের খুশি রাখতে। রাজনীতির নামে তারা এখনও পাকিস্তানপন্থী কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সদা সতর্ক থাকতে হবে যেনো এই সোনার বাংলাদেশকে নিয়ে আর কোন স্বরযন্ত্র না হয়।

‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না‘ শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধ। নকশা করেছেন স্থপতি ফরিদ ইউ আহমেদ ও জামি আল শাফি

রক্তক্ষয়ী ৯ মাসের যুদ্ধে বীর বাঙালী মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত করেছিলেন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এই যুদ্ধে আমরা হারিয়েছি ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ নারীর সম্ভ্রম ও আত্মত্যাগ এবং অসংখ্য বুদ্ধিজীবির প্রাণ। ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাই পাক হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসর ঘাতকদের। বিজয়ের এই মাসে আমরা প্রশান্তিকায় শ্রদ্ধা জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। আজকের শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে আমাদের শ্রেষ্ঠ শহীদ সন্তানদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁদের আদর্শ ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে, সব দেশে। তাঁদের অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হোক নতুন প্রজন্ম।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments