নতুন বছর ২০২০ সাল কড়া নাড়ছে দরোজায়। পুরাতন বছর ২০১৯ প্রায় বিদায়ের পথে। নতুনকে বরণ এবং পুরাতনকে বিদায় জানানোর মহা উৎসব নিউ ইয়ার্স ইভ এবারও উদযাপিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। সিডনির আশেপাশের প্রায় সকল সাবার্ব সহ নিউ সাউথ ওয়েলস্ রাজ্যের অনেক বনভূমি জ্বলছে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে। কথা উঠেছিলো এতো ক্ষয় ক্ষতি এবং চলমান বিরূপ দাবানলের মধ্যে সিডনির ঐতিহ্যবাহী আতশবাজি হয়তো আয়োজিত হবেনা। কিন্তু সবকিছু বিবেচনা করে রাজ্য সরকার ঘোষণা দিয়েছে আতশবাজি চলবে। শো মাস্ট গো অন।
একমাত্র আতশবাজির জন্যই সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসে এই সিডনিতে। শুধু গত বছরের হিসেব মতে সিডনির আতশবাজিতে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ হার্বারে মিলিত হয়েছিলো। এবছর প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ সিডনিতে জড়ো হচ্ছে এই আতশবাজি উপলক্ষে। রাজ্য সরকার ৫.৮ মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ করেছে। এটাকে কেন্দ্র করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, এয়ার বিএনবি, ট্রান্সপোর্টসহ যাবতীয় পর্যটন শিল্প কোটি কোটি ডলার আয় করে। নববর্ষ বরণের এই উৎসব থেকে শুধুমাত্র রাজ্য কোষাগারে যুক্ত হবে ১৩০ মিলিয়ন ডলার। সুতরাং এই আতশবাজি বন্ধ রাখার অর্থই পিঁছিয়ে পড়া।

এবছরের স্মরণকালের ভয়াবহ দাবানলে এ পর্যন্ত ৯’শর বেশি বাড়ি পুড়ে গেছে, সাড়ে তিনশ বাড়ির ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে, প্রায় দুই হাজার আউটবিল্ডিং বা স্থাপনা পুড়ে গেছে। তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলছে। আবহাওয়া বিভাগ জানাচ্ছে, আগামীকাল মঙ্গলবার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত উঠতে পারে। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিভাগ জানাচ্ছে, দাবানলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকবে পুরো সিডনি। এসময় শিশু ও ফুসফুস রোগে নাজুক ব্যক্তিদের বাইরে না বেরোনোই শ্রেয়। দাবানলের তাণ্ডব চলবে নতুন বছরেও। সোমবার ও মঙ্গলবারে দাবানলে নতুন বনভূমি আগুনে পুড়বে। এতো কিছুর পরেও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডনির আতশবাজি চলবে। রাত ৯টায় শিশু ও পরিবারদের জন্য এবং মধ্যরাতে বৃহৎ আতশবাজি হবে সিডনির আইকন হার্বার ব্রিজ ও অপেরা হাউজকে কেন্দ্র করে সিডনি হার্বারে।
হার্বার ছাড়াও প্যারামাট্টা, ডার্লিং হার্বার, ব্রাইটন লি স্যান্ডসে আতশবাজি হবে মঙ্গলবার রাত ৯টায়। ক্যাম্পেলটাউনের কুশিগায়া পার্কে আতশবাজি স্থানীয় কাউন্সিল বন্ধ ঘোষণা করেছে। কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী প্রশান্তিকাকে জানান, ক্যাম্পবেলটাউনসহ সিডনির দক্ষিণ পশ্চিম এলাকায় আগামীকাল তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে উঠতে পারে। চলমান দাবানলে যুক্ত হতে পারে নতুন কোন এলাকা। আবহাওয়ার এই বিপর্যয়ের কারনে সেখানে আতশবাজি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কার্নিভাল রাইড, মঞ্চে জাঁকজমক গান, লেজার রশ্মির আয়োজন থাকবে সেখানে। এছাড়া ফুড ট্রাকসহ খাবারের ব্যবস্থাও থাকতে পারে। অর্থ্যাৎ আতশবাজি বন্ধ থাকলেও কাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান চলবে।
মাঝখানে বাংলাদেশের কোন মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর মতো অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীও সমালোচিত হলেন। এই ভয়াবহ দূর্যোগেও তিনি পরিবার নিয়ে হাওয়াইতে হলিডে কাটিয়ে এলেন। সরকারের ভেতরেই এর জন্য কঠোর সমালোচনা হয়। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশোপ গণমাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। হলিডে থেকে ফিরেই দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তিনি বিলম্বে হলেও বুঝতে পেরেছেন এই দূর্যোগে তাঁর দেশ ছেড়ে গিয়ে অবকাশ যাপন করতে যাওয়া ঠিক হয়নি।
সবশেষে ছোট্ট একটা বিষয় শেয়ার করছি। একটা নোটিফিকেশন দেখলাম, স্বাক্ষরের নীচে তারিখ বা যে কোন নথিপত্রে নতুন বছর ২০২০ সাল লিখতে কখনই সংক্ষেপে ‘২০ লেখা ঠিক হবেনা। সেরকম করে লিখলে ভবিষ্যতে ০১/০১/২০ কে পরিবর্তন করে দুষ্ট লোক বা মহল ০১/০১/২০১৮ বা যেকোন বছরের একটি তারিখ লিখে প্রতারনা করতে পারে। বিষয়টি নতুন বছরের শুরুতেই ভেবে রাখা ভালো।
দাবানল, আকাশে কালো ধোঁয়াসহ আবহাওয়ার বিপর্যয়ের কারণে এবার আতশবাজি বন্ধ রাখতে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ স্বাক্ষর করেছিলেন। সিডনির লর্ড মেয়র ক্লোভার ম্যুর তবুও শেষমেষ আতশবাজি করতে চান। কেননা এই উপলক্ষে রাজ্যের কোষাগারে অনেক অর্থযোগ হবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে, লাখ লাখ পর্যটক একটি উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে।
নতুন বছরের প্রাক্কালে আমরা প্রশান্তিকার সকল পাঠক, লেখক, পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা। শুভ হোক ২০২০।