সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলা: ৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিলেন আদালত

  
    

প্রশান্তিকা ডেস্ক: প্রায় বত্রিশ বছর আগে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে সগিরা মোর্শেদ হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষে দাখিল করা অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এটি আমলে নেন।

প্রথম আলো সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) তাপস কুমার পাল বলেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যা মামলায় চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। আগামী ১৫ মার্চ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে।

নিহত সগিরা মোর্শেদ

এই মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে গতকাল কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। চার আসামি হলেন নিহত সগিরার ভাশুর চিকিৎসক হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তাঁর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও মারুফ রেজা (৫৯)।

পিপি তাপস কুমার পাল বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা চার আসামির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। আদালত তা নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। আসামি পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি। বাদীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

গত ১৬ জানুয়ারি সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রে বলা হয়, পারিবারিক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, গত বছরের ১৭ আগস্ট মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআই। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তকাজ শুরুর পর চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
পিবিআই সংবাদ সম্মেলনে জানায়, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সগিরা মোর্শেদার ভাশুর, ভাশুরের স্ত্রী ও শ্যালক মিলে তাঁকে (সগিরা) হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাঁরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তাঁকে হত্যা করান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এটি কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল না।

নিহত সগিরা মোর্শেদের মেলবোর্ন প্রবাসী মেয়ে সারাহাত সালমা চৌধুরী জানান, “মহামান্য আদালত ৯ মার্চ ২০২০ তারিখে আমার আদরের আম্মি সগিরা মোর্শেদ এর হত্যার চার্জশীট আমলে নিয়েছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন এর দরবারে প্রার্থনা, আমার মায়ের হত্যার সাথে জড়িত চার আসামির ( হাসান আলী চৌধুরী, সায়দাতুল শাহীন, আনাস রেজওয়ান ও মারুফ রেজা ) উপযুক্ত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালত আমাদের ৩২ বছরের কষ্ট ও যন্ত্রণার অবসান করবেন।” তিনি আরও বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচারের মাধ্যমে এই চার আসামিদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করণের মাধ্যমে কেউ আইনের উর্ধে নয় – তা ৩২ বছর পরে হলেও সত্য প্রমাণিত হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, ঢাকায় পিবিআইয়ের সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে প্রশান্তিকার টিম নিহত সগিরা মোর্শেদের মেলবোর্ন প্রবাসী মেয়ে সারাহাত সালমা চৌধুরীকে খুঁজে বের করে। গত ২২ নভেম্বর ২০১৯ সালে প্রশান্তিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে সারাহাত তার মা হত্যার ঘটনা সম্পর্কে বলেন। সেদিনের ক্লাস টুতে পড়া ভিকারুন্নিসা স্কুলের ছোট্ট শিশু সারাহাত সালমা চৌধুরী। ১৯৮৯ সালে ২৫ জুলাই স্কুল গেটের অদূরেই নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন তাঁর মা সগিরা মোর্শেদ। পুরো ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে সবাই জানতেন ওটা ছিলো ছিনতাইয়ের ঘটনা এবং ছিনতাইকারীর গুলিতেই প্রাণ হারান তিনি। সব ভুল ভেঙ্গে দিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন সম্প্রতি তদন্ত শেষ করে বলছেন, ওটি ছিলো পরিকল্পিত খুন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments