প্রশান্তিকা ডেস্ক: উপমহাদেশের কিংবদন্তী সঙ্গীত গুরু শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নক্ষত্র পণ্ডিত যশরাজ মারা গেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে অবস্থানকালীন গতকাল তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯০ বছর। তাঁর কন্যা দূর্গা যশরাজ গনমাধ্যমকে তাঁর বাবার মৃতের খবরটি জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
পণ্ডিত যশরাজ ১৯৭৫ সালে পদ্মশ্রী, ১৯৯০ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০০০ সালে পদ্মবিভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন। আট দশকেরও বেশি সময় ধরে পণ্ডিত যশরাজের বর্ণাঢ্য সঙ্গীতের জীবন। তিনি ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। ১৯৩০ সালের ২৮শে জানুয়ারি হরিয়ানার হিসারে তাঁর। বাবা পন্ডিত মতিরামও ছিলেন ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের একনিষ্ঠ সাধক। তাঁর কাছেই সঙ্গীতের প্রথম হাতেখড়ি যশরাজের। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং রেডিওতে ধ্রুপদী গান গাওয়া শুরু করেন। বেগম আখতার ছিল তাঁর সঙ্গীতের অনুপ্রেরণা।
পণ্ডিত যশরাজ জীবনে বহুবার বাংলাদেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। বাংলাদেশে রয়েছে তাঁর অগণিত ভক্ত ও অনুরাগী। মেলবোর্ন প্রবাসী সঙ্গীত শিল্পী নিরুপমা রহমান খুব ছোটবেলায় পণ্ডিত যশরাজের সান্নিধ্যে এসেছিলেন।

সম্প্রতি প্রশান্তিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে নিরুপমা বলেন, “তখন আমার বয়স নয় বছর। ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সামনে বসে পণ্ডিত যশরাজের গান শুনছিলাম। হঠাৎ শুনি অনুষ্ঠান শেষে পণ্ডিত যশরাজ মাইকে “সামনে বসা টপ ও স্কার্ট পরা ছোট্ট মেয়েটা” বলে আমাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি পরেরদিন তাঁর সাথে আমাদের দেখা করতে বললেন। আমরা ধানমন্ডির একটি রেস্টহাউজে দেখা করলাম। তিনি আমার মায়ের হাত ধরে বললেন, ‘কাল সারা অনুষ্ঠানে তোমার মেয়ের দিকে তাকিয়েছিলাম কারণ ও গান বা সুরের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলো এবং ঠিক ঠিক হাত বা মাথা নাড়াচ্ছিলো।’ তিনি মা কে অবাক করে দিয়ে বললেন, ‘আমি বুঝতে পারছি ও শরীর ও মন দিয়ে গানকে অনুভব করে। তুমি মেয়েটাকে আমায় দিয়ে দাও। আমি ওকে নিয়ে যাই। আমার মতো করে পুরো সময় ওকে গান শেখাবো।” নিরুপমা রহমান বর্ষীয়ান এই সঙ্গীত গুরুর মৃত্যুতে এই স্মৃতি রোমন্থন করে আবেগে আপ্লুত হন। তিনি পরপারে পণ্ডিত যশরাজের আত্মার শান্তি কামনা করেন।