সবকিছু পেতে নেই, সব পাওয়া সম্ভবও নয় । শিল্পী রহমান

  
    

প্রত্যাখ্যান গ্রহন করতে না পারা একটা পর্যায়ে এসে অবসেশনে রূপ নেয়, এটাকে মনোবিজ্ঞানীরা ওসিডি’র লক্ষণ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রয়োজনে প্রত্যাখ্যান করতে পারা এবং প্রত্যাখ্যান গ্রহন করতে পারা দুটোই অত্যন্ত জরুরী।
নিজের যখন মনে হয়, আমি এটা চাই না, দ্বিতীয় কোন চিন্তা না করেই আমি তা প্রত্যাখ্যান করতে পারি নিশ্চিন্তে। খুব সাহস করে, সমস্ত শক্তি দিয়েই তা প্রত্যাখ্যান করি। কারণ একজন সুস্থ এবং স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে এটা আমার অধিকার।
কিন্তু এই আমাকেই যখন আরেকজন প্রত্যাখ্যান করে আমি তা গ্রহন করতে পারিনা। এটা যে সেই মানুষটারও জন্মগত অধিকার, আমি তখন তা মানতে চাই না। আমার কাছে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত মনে হয় যখন এটা আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আরেকজন কেন আমাকে চাইবে না সেটা আমার বোধগম্য নয়। আমি ভাবি, আমাকে কেন চাইবে না, আমি কি দোষ করলাম ? এটা যে কারো দোষ বা নির্দোষ হবার ব্যাপার নয়, এটা শুধুমাত্রই দুজন মানুষের জীবন দর্শন, ন্যায়নীতি বা মূল্যবোধের পার্থক্যের কারণেও হতে পারে তা বুঝতে চেষ্টা করিনা, কারণ তখন আমি কি চাই সেটাই সবচেয়ে বড় সত্য হয়ে সামনে দাঁড়ায়। এটা আমাকে অনেক বেশী অপমানিত করে, রাগান্বিত করে এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ করে তোলে।

এরপর আমি তার দোষ খুঁজতে থাকি, তবে তার প্রত্যাখ্যানে সমর্থন দেবার জন্য নয়, দোষ খুঁজি তাকে অপরাধবোধ দেবার জন্য যেন সে নিজেকে ছোট মনে করে অর্থাৎ অপরাধবোধে পীড়িত হয়ে যদি ফিরে আসে সেই আশায়। তাতে কাজ হয়না বলে আমার রাগ বাড়তে থাকে, এরপর আমি বাইরে যেয়ে আরও দশজনের কাছে তার দোষের কথা বলতে শুরু করি এবং সেই সাথে আমি কতোটা নিরাপরাধ এবং অসহায় সেটাও প্রকাশ করি।
কেন?
কারণ আমি যাকে চাই সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না, আমি তা হতে দেবো না। আমি না চাইলে ভিন্ন কথা ছিল। বুকের ভেতরে ভাঙনের শব্দ শুনি। প্রচন্ড কষ্টে এবং যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকি, ঘুমাতে পারিনা, খেতে ভালো লাগে না, রাগে দুঃখে অপমানে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো জ্বলন্ত আগুনে ফুঁসতে থাকে ভেতরের লাভা। দশজনের কাছে তার দোষের কথা বলেও যখন কাজ হয় না, নিজের মনেও শান্তি খুঁজে পাইনা, আমি তখন প্রতিশোধ নেবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। একা হয়ে যাবার ভয় তখন বীভৎস রূপ ধারণ করে।
ব্যাপারটা আরও বেশী ঘোলাটে হয়ে যায় যখন সে আরেকজনকে চাইতে শুরু করে। আমি যাকে চাই, সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করে আরেকজনকে চাইবে, এটাতে অপমানবোধ তীব্রতর হতে থাকে।

এবার শুধু প্রতিশোধই নয়, আমি তার ক্ষতি করেই ছাড়বো বলে সিদ্ধান্ত নিই। যেই মানুষটাকে আমি এতো ভালোবাসি বলে দাবী করছি, যার প্রত্যাখ্যান আমি মেনে নিতে পারছি না, ঠিক সেই মানুষটারই সবচেয়ে বড় সর্বনাশ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
তাহলে কি দাঁড়ালো, আমি যেটা চাই সেটা আমাকে পেতেই হবে। আমি যেটা চাইনা সেটা আমাকে কোনোভাবেই কেউ জোর করে দিতে পারবে না। মন খারাপ হওয়া এক কথা কিন্তু প্রত্যাখ্যান গ্রহন করতে না পেরে প্রতিশোধ নেবার প্রবণতা মানসিক সুস্থতা নয়।

মনোবিজ্ঞানীরা এটাকে অবসেসিভ কম্পালসিভ পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার বা ব্যক্তিত্বের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সবকিছু আমি যেভাবে চাই সেভাবে না পেলে আমি এভাবে অসুস্থ হয়ে যাবো, এমন মানসিকতা হলে, আমার চিকিৎসা দরকার যেন আমি প্রত্যাখ্যানকে গ্রহন করতে পারি। কারণ প্রত্যাখ্যান জীবনেরই অপরিহার্য অংশ।
প্রত্যাখ্যান না নিতে পারার আরেক দিক হলো , “হেরে যাওয়ার অনুভূতি “ দংশন করতে থাকে ২৪ ঘন্টা। যাদের মধ্যে সামান্যতম নারসিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার থাকে তাদের জন্য হেরে যাওয়া মেনে নেওয়া অত্যন্ত কষ্টকর। প্রত্যাখ্যানকে তারা হেরে যাওয়া মনে করে। এক সময় ভালো লাগতো, বর্তমানে সেই অনুভূতির সমাপ্তি ঘটেছে, মানসিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এটা মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। একজন নারসিসিস্ট নিজেই সব নিয়ন্ত্রণে রাখতে পছন্দ করে, যা এক সময় সম্পূর্ণ নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিল, হঠাৎ করে সেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার অনুভূতি ধ্বংস করে দেয় তাদের আত্মসম্মানবোধকে। কিন্তু তারা দুঃখ প্রকাশ করতে নারাজ, ভেতরে কষ্টের গভীর ক্ষতকে লুকিয়ে রাগে এবং প্রতিহিংসায় জ্বলে ওঠে। হিসাব করতে শুরু করে এই সম্পর্কের পেছনে তারা কতো সময় ও পরিশ্রম দিয়েছে এবং এটা তার কতোটা প্রাপ্য ! এরপর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেপরোয়া আচরণ করতে শুরু করে ।

সম্পুর্ন ডিপ্রেশনে ডুবে যাওয়া এবং নিজের বা অন্যের ক্ষতি করবার মনোবৃত্তি পোষণ করা থেকে মুক্তি পাবার জন্য মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
আমাদের ছোটবেলা থেকে শিখতে হবে, প্রত্যাখ্যান আমাদের জীবনেরই একটা অংশ। একদম স্কুলজীবন থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আমাদের প্রত্যাখ্যাত হতে হয়, তাই এই শিক্ষা অপরিহার্য। আমি যেমন একজনকে প্রত্যাখ্যান করবার অধিকার রাখি, আমাকে প্রত্যাখ্যান করবার অধিকারও অন্যের আছে। আমাদের পন্থা ভিন্ন হতে পারে কারণ আমরা ভিন্ন মানুষ। অন্যের পন্থা অপরিচিত বা গ্রহণযোগ্য মনে না হলেও প্রত্যাখ্যান কিন্তু প্রত্যাখ্যানই।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস, (UCLA) পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেছে যে , মানসিক ব্যথার এবং শারীরিক ব্যথার সংবেদনশীলতা মস্তিষ্কের একই অংশে অবস্থান করে, এই দুই ধরণের ব্যাথাই সমানভাবে আঘাত করতে পারে। আমাদের ব্যথায় আমরা যে প্রতিক্রিয়া করি সেটা জেনেটিক্স দ্বারা প্রভাবিত হয়। আমাদের শারীরিক ব্যথার প্রতি সংবেদনশীলতা যদি অনেক বেশী থাকে অর্থাৎ ব্যাথা সহ্য করার ক্ষমতা কম থাকে, তাহলে প্রত্যাখ্যানের অনুভূতিও আমাদের অনেক বেশী ভেঙে দিতে পারে। বিশেষ করে প্রেম ভালোবাসার অনুভূতি আমাদের ভালো বোধ করবার নিউরোকেমিক্যালগুলিকে (strong feel-good neurochemicals) ভীষণভাবে উদ্দীপিত করে। প্রত্যাখ্যানের অনুভূতি ড্রাগ থেকে প্রত্যাহারের মতো “ ইউথড্রল সিন্ড্রোম” দিতে পারে। নৃতত্ত্ববিদ হেলেন ফিশার বলেছেন , এটি আমাদেরকে অবসেসিভ চিন্তাভাবনা এবং বাধ্যতামূলক আচরণে জড়িত করতে বাধ্য করে।

একটা গবেষণায় দেখা গেছে, বেশীরভাগ মানুষ প্রত্যাখ্যানের পরে ভালো বোধ করতে শুরু করে আনুমানিক ১১ সপ্তাহের পর থেকে। ১১ সপ্তাহ পরে তারা নিজেদের যত্ন নেবার মানসিকতা ফিরে পেতে পারে, ডিভোর্স এর পরেও একই রকমের অনুভূতি হতে পারে। তবে ১৫% মানুষের ক্ষেত্রে এর চাইতেও লম্বা সময় লাগতে পারে, নির্ভর করে সম্পর্কের ওপরে এবং ব্যক্তি বিশেষে । (“It’s Over,” Psychology Today, 2015) প্রত্যাখ্যান থেকে মানুষের ডিপ্রেশন হতে পারে, বিশেষ করে যদি অতীতে কারো হালকা ডিপ্রেশন অথবা অন্য কোন ট্রমা বা হারাবার অভিজ্ঞতা থাকে।

খুব বেশী নির্ভরশীল ব্যক্তিরা যখন কারো সাথে রোম্যান্টিকভাবে জড়িত হয়, তখন তারা তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ, আকাঙ্ক্ষা এবং বন্ধুদের সঙ্গও ছেড়ে দেয়। এরা তাদের পার্টনারের সাথে মানসিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নির্ভরশীলতায় এমন ভাবে জড়িয়ে থাকে, যে এখান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে এই ধরণের ব্যাক্তিরা প্রায়শই স্ব-সংজ্ঞা এবং স্বায়ত্তশাসনের অভাব (lack self-definition and autonomy ) বোধের কারণে তাদের অভ্যন্তরীণ শূন্যতা পূরণ করার জন্য কাউকে অনুসন্ধান করে থাকে অর্থাৎ এমন সঙ্গী খুঁজতে থাকে যারা তাদের সেই শুন্যতা পূরণ করবে। এই মানসিকতা কেবল সম্পর্কের সমস্যাই তৈরি করেনা, একা হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এটি আবার পুনরুত্থিত হতে পারে। এই একা হয়ে যাওয়া বা অভ্যন্তরীণ শূন্যতার ভয়ে প্রত্যাখ্যান গ্রহন করবার ক্ষমতা লোপ পায়। কেউ কেউ অত্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠে এবং প্রতিশোধ নেবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে যেটা শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে।

ব্রেকআপ ছোটবেলার কোন বেদনা বা দুঃখকে হঠাৎ করে ট্রিগার করতে পারে, যেমন পিতামাতাকে হারানো বা তাদের দ্বারা পরিত্যক্ত হওয়ার ঘটনা। অনেক মানুষ আছে ছোটবেলায় পিতামাতার কাছ থেকে ভালোবাসা না পাওয়ার কারণে (সেটা যে কোন কারনেই হতে পারে, মৃত্যু, ডিভোর্স বা পরিবার দ্বারা পরিত্যক্ত ), খুব ছোট বেলা থেকেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে কারণ তারা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা চায় যা কখনোই পায়নি। শৈশবকালে বাবা মায়ের কাছ থেকে না পাওয়া ভালোবাসার তৃষ্ণা মেটানোর প্রয়োজন এবং বুকের গভীরে ক্ষত রক্ষা করবার প্রত্যাশায় অনেকে শর্তহীন ভালবাসার সন্ধানে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এটি মানুষকে একটি নেতিবাচক “বিসর্জন চক্র” (“cycle of abandonment” ) -এ জড়িয়ে ফেলতে পারে যা মানুষের ভেতরে লজ্জা, ভয় এবং সম্পর্ক ত্যাগের ভীতির সঞ্চার করে। এরা সবসময় নিজেকে অযোগ্য মনে করে এবং প্রত্যাখ্যাত হবার আশঙ্কায় ভোগে। এই প্রত্যাখ্যানের ভয় ছোট বেলা থেকেই বাসা বাঁধে মনের গভীরে, যে কোন সম্পর্ক নিয়েই এই আশংকা জাগ্রত হতে পারে। আর শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত হতে উস্কে দেয় যার কারণে সম্পর্ক আসলেই ঝুকিপুর্ন হয়ে যায়। কাউন্সেলর এবং থেরাপিস্ট ডঃ ডারলিন ল্যান্সার এর লেখা “ রিকভারি ফ্রম রিজেকশন এন্ড ব্রেকাপ (Recovery from Rejection and Breakups, 2020 )” থেকে কয়েকটি টিপস দেয়া হলো।

সুস্থ হবার টিপসঃ
১/ সন্তোষজনক ফলাফলের জন্য নিজের এবং অন্যের সাথে আপনার সম্পর্কের পরিবর্তন শুরু করুন; সবার আগে করুন আপনার প্রাক্তনের সঙ্গে। বিশেষজ্ঞরা একটা ব্যাপারে খুব জোর দিয়ে বলেছেন যে, কিছুদিনের জন্য আপনার প্রাক্তনের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দিন, এটা খুব বেদনাদায়ক এবং অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ হলেও খুব উপকারী । যত তাড়াতাড়ি এটা করতে পারবেন ততো তাড়াতাড়ি নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

২/ প্রাক্তনকে কল করা, টেক্সট করা, অন্য কাউকে দিয়ে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত হওয়া, সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের সব রকমের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানবার জন্য ২৪ ঘণ্টা তদন্ত করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। এমন করলে অল্প সময়ের জন্য স্বস্তি মিললেও আপনার ভেতরের অবসেসিভ কম্পালসিভ আচরণকে আরও শক্তিশালী করে ফেলবেন। (আপনি যদি ডিভোর্সের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকেন, তাহলে দরকারি মেসেজ বা চিঠি উকিলের দ্বারা আদান প্রদান হতে পারে, কিন্তু আপনাদের সন্তানদের মাধ্যমে নয়), আর ভালোবাসার সম্পর্ক হলে তো সেটারও প্রয়োজন নেই।

৩/ মেডিটেশন করুন, নিজেকে ভালোবেসে, নিজের স্বস্তি হয় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে এমন মন্ত্র দিয়ে মেডিটেশন করুন।

৪/ প্র্যাকটিস করুন “লেট গো”
৫/ লম্বা সময় ধরে অপরাধবোধ, আপনার জীবনের হাসি আনন্দকে দূরে ঠেলে দেবে। তাই সম্পর্কে থাকা অবস্থায় যত ভুল করেছেন তার জন্যে নিজেকে ক্ষমা করে দিন।
৬/ সম্পর্ক শেষ করবার ভালো দিক বা উপকারগুলো লিখে ফেলুন। গবেষণা করে দেখা গেছে এটা খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি।
৭/ নিজের ভুল বিশ্বাস এবং ধারণাকে দুর করুন, যেমন “ আমার দ্বারা কিছু হবে না, আমি আর কাউকে সঙ্গী করতে পারবো না, আমাকে কেউ ভালবাসবে না “ ইত্যাদি ধরনের নেতিবাচক কথা বলা বন্ধ করুন।
৮/ নিজের সীমানা নির্ধারণ করে ফেলুন, এটা খুব জরুরী। বিশেষ করে ডিভোর্সের কারণে সন্তান শেয়ার করবার ব্যাপারে খুব নিখুতভাবে নিয়ম সাজিয়ে ফেলুন। আপনি যদি রাগ , বিবাদ এবং প্রতিরক্ষামূলক আচরণ করেন তাহলে সন্তানদের ক্ষতি তো হবেই , আপনি নিজেও ভালো থাকবেন না ।
৯/ আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু আপনার ভালো থাকা এবং দ্রুত সেরে ওঠা নির্ভর করছে আপনার কার্যক্রমের ওপর। আপনি কতো দ্রুত নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বেড়ে ( grow) উঠতে পারবেন সেটাই নির্ধারণ করবে আপনার সামনে এগিয়ে যাবার পথ।

আমাদের ছোটবেলা থেকে শিখতে হবে প্রত্যাখ্যান আমাদের জীবনেরই একটা অপরিহার্য অংশ। কি ভাবছেন? আমাদের ছোটবেলা পেরিয়ে গেছে? তাহলে আমাদের সন্তানদের শেখাবো যেন ওরা সম্পূর্ণ ভেঙে না পড়ে। আমি যেমন একজনকে প্রত্যাখ্যান করবার অধিকার রাখি, আমাকে প্রত্যাখ্যান করবার অধিকারও অন্যের আছে। সবকিছু পেতে নেই, সবকিছু পাওয়া সম্ভবও নয়, এই সত্যকে মেনে নিতে হবে। এতে সত্যিই কোনো অপমান নেই, সমাজ শিখিয়েছে আমাদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত অনুভূতি। মন ভেঙে যাবে, অন্যায় মনে হবে, অসহায় লাগবে কিন্তু এই সত্য মেনে নেওয়া সভ্য সমাজের শিক্ষা।

সবশেষে বলবো, স্বয়ংসম্পুর্ন হতে। মানসিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে স্বয়ংসম্পুর্ন হন। ভালোবাসার মানুষকে ভালবাসুন কিন্তু নির্ভরতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন যেন সম্পর্কের ভাঙন আপনাকে ভেঙে দিতে না পারে।

শিল্পী রহমান: 
গল্পকার, কবি, সংস্কৃতিকর্মী, কাউন্সেলর ও গবেষক। স্থায়ী নিবাস ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়ায়। 
প্রকাশিত গ্রন্থসমুহ: ধর্ষণ ধর্ষক ও প্রতিকার; উৎকণ্ঠাহীন নতুন জীবন; মনের ওজন; সম্ভাবনার প্রতিচ্ছায়ায়; যুদ্ধ শেষে যুদ্ধের গল্প; পথের অপেক্ষা; পাহাড় হবো ইত্যাদি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments