সময়ের প্রয়োজনে এখন হাইব্রীড নেতাই দরকার ! – মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক

  
    

সর্ব জমানায় দেখা গেছে সৎ-পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতারা রাজনীতিতে ‘ব্যর্থ’। তারা কুঁড়ে ঘরে থেকে খেয়ে-না খেয়ে, হাটে-ঘাটে-মাঠে রোদবৃষ্টি উপেক্ষা করে, ঘুরে ঘুরে মানুষের উপকার করতে পারেন, কিন্তু নিজেদের পকেট ভরতে ‘ব্যর্থ’। তারা অন্যের ঘরে আলো জ্বালাতে উস্তাদ কিন্তু তাদের নিজের ঘর অন্ধকার। তারা অন্যের ঘরে চুলা জ্বালাতে যারপরনাই কস্ট করেন কিন্তু তাদের নিজের ঘরের চুলা জ্বলে না। তারা নিজেরা পয়সার পিছনে ছোটেন না, তাই পয়সা কামাতে পারেন না। ফলশ্রুতিতে, তাদের কর্মীরাও খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করেন।

তারা আন্দোলন করে ব্রিটিশদের তাড়াতে পারেন, পাকিস্তানিদের তাড়াতে পারেন, কিন্তু কর্মীদের জন্যে ভালোবাসা উপেক্ষা করে নিজের ঘরের ‘দুর্নীতি’ দূর করতে পারেন না। তারা অন্যের জান-মাল রক্ষা করতে পারলেও, নিজের ‘কম্বলটুকু’ রক্ষা করতে পারেন না । এমনকি নিজের জীবন দিয়েও তারা দেশের মানুষকে খুশী করতে ‘ব্যর্থ’ হন। দেশের মানুষের এমন ভাব – কে বলেছিল উনাদের জীবন দিতে – আমরা পাকিস্তানিদের কাছেই ভালো ছিলাম – না হয় আমরা পাকিস্তানিদের গোলাম হয়েই থাকতাম – তবু উর্দুতে মালিকদের প্রশংসাতো করতে পারতাম, গালি খেলেও উর্দুতেই খেতাম !!

স্বাধীনতা পরবর্তী, বিশেষ করে ৭৫ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ ২১ বছর (৭৫ থেকে ৯৬) দেশ কি সুন্দর ‘আমরা সবাই রাজা’ স্টাইলে চলেছে। কেবল মাত্র সৎ-পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতাদের অসহযোগ আন্দোলন সেই চমৎকার সময়টুকু জাতির কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে জাতিকে ‘গনতন্ত্র’ নামক ‘ভাইরাস’ জোড় করে খাইয়েছে। জাতি আজও সেই ‘গনতন্ত্র’ নামক ব্যাধি থেকে নিষ্কৃতি পায় নি !!

সৎ-পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতারা নির্বাচনে অতি মাত্রায় ‘অযোগ্য’। তারা না পারেন ভোট কিনতে, না পারেন কেন্দ্র দখল করতে, না পারেন সিল মারতে। তাদের কারনে ৯১ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে যায়। আওয়ামী লীগের আগেই বোঝা উচিত ছিল অন্য দল হাইব্রীড আমদানি করলে, তাদেরও করা উচিত। হাডুডু খেলা ক্রিকেট প্লেয়ার দিয়ে হয় না !!

তাই দেশে এখন হাইব্রীড নেতাদেরই দরকার। একমাত্র হাইব্রীড নেতারাই পারেন ডিমান্ড আর সাপ্লাই মেকানিজম সুষ্ঠভাবে চালু রাখতে। তারাই পারেন দলকে সৎ-পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতাদের হাত থেকে উদ্ধার করতে। দল যতদিন সৎ-পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতাদের হাতে থাকবে ততদিন দেশে স্পিড মানির উত্থান বন্ধ থাকবে, দুর্নীতি বন্ধ থাকবে, ব্যাঙ্ক-শেয়ার মার্কেটের টাকা লুটপাট বন্ধ থাকবে, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ থাকবে, দেশের ‘তথাকথিত’ উন্নয়ন হবে তবে সে উন্নয়নে দলীয় কর্মীদের পকেটের উন্নয়নের কোন সম্ভাবনা থাকবে না।

তারাই পারেন নিজেদের ও কর্মীদের পকেট সচল রাখতে – তাতে ব্রিজ উদ্বোধনের আগেই পড়ে যাক, আর রাস্তা বৃষ্টিতে ধুয়ে যাক, আর রডের জায়গায় বাঁশ আসুক, অথবা সমস্ত পণ্যে  ভেজাল আসুক, অথবা সমস্ত অফিসে টেবিলের উপর দিয়েই ঘুষ লেনদেন হোক, অথবা বিসিএস না দিয়ে লোকজন বালিশ উঠানোর কাজ করতে চাক, তাতে নেতাদের কি আসে যায় !!

সেজন্যে সরকারী দলে থাকা অবস্থায় দল সুষ্ঠভাবে চালাতে হলে সৎ-পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতাদের অনতি বিলম্বে অবসরে পাঠিয়ে দিতে হবে। তারা যেতে না চাইলে তাদের “দুর্নীতিবাজ”, “জামাত-বিএনপির দালাল”, “অচল মাল” ইত্যাদি তকমা দিয়ে তাদের মধ্যে অভিমান জাগ্রত করতে হবে। এরপর তাদের শূন্যস্থানে হাইব্রীড নেতাদের অতি সত্বর নিয়োগ দিতে হবে। তারাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জনগন থেকে আলাদা করে ফেলতে পারবে। নিজেদের ব্যাংকের একাউন্টে শত শত কোটি টাকার “উন্নয়ন” – দেশের উন্নয়নের সাথে দেখিয়ে উনার সামনে তারা শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন তুলে ধরতে পারবে, সাধারন কর্মীদের কান্না চাপা পড়ে যাবে উন্নয়নের বুলিতে। প্রয়োজনে সৎ-পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতাদের বিভিন্ন কেইসে জড়িত করে দৌড়ের উপর রাখতে হবে। আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড হয়ে যাবে গনতন্ত্রের গ্রহনযোগ্য চর্চা।

এরপর মেইক সিউর করতে হবে যেন টপ লেভেলের নেতা-নেত্রীদের আশে পাশে সৎ-পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতারা ভিড়তে না পারেন। টপ লেভেলের নেতা-নেত্রীদের সব সময় ব্যস্ত রাখতে হবে যাতে তারা সৎ-পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতাদের খুঁজে না পান। তাদের কাছে নির্ধারিত দামের কয়েকগুন বেশী দিয়ে কিনে উন্নত প্রযুক্তির সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে নেক্সট লেভেলের “উন্নয়ন” আমদানি করাতে হবে। তাহলেই দেশে “সুদিন” আসবে – দলের সবাই খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবে।

আসুন আমরা নিম্নলিখিত ফর্মুলা মেনে চলিঃ
দল = হাইব্রীড (দুর্নীতিবাজ) নেতাকর্মী + ক্ষমতার অপব্যাবহারকারী প্রশাসন – (সৎ/পরীক্ষিত/ত্যাগী নেতাকর্মী) (যদি ক্ষমতায় থাকা দল হয়)
দল = (সৎ/পরীক্ষিত/ত্যাগী নেতাকর্মী) + প্রশাসনের রক্তচক্ষু/জেল জরিমানা (যদি বিরোধী দল হয়)

তবু ভালো থাকুক দল, হোক হাইব্রীডদের জয় জয়কার। সৎ নেতারা দলের ভালোবাসাটুকু বুকে নিয়ে, একবুক অভিমান নিয়ে বেঁচে থাকুক !

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments