প্রশান্তিকা ডেস্ক: প্রথম আলোর জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ৫ ঘন্টা আটক রেখে হেনস্তা করার পরে শাহবাগ থানায় নিয়ে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাকে অত্যাচারের সময়েই সচিবালয়ে থাকা অন্যান্য সাংবাদিকেরা সেখানে হাজির হলে তাদেরকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এবং তাদের প্রশ্নের কোন জবাব দেয়া হয়নি। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেয়ার কথা বলে রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশের একটি দল সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নিয়ে অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে মামলা দেয়া হয়।

রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা বিকেলে সচিবালয়ে এবং রাতে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

প্রথম আলো জানায়, রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাঁকে সেখানে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, ‘গুরুত্বপূর্ণ’ নথিপত্রের ছবি তোলা ও সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে তাকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। তবে রাত ১০টার দিকে শাহবাগ থানায় রোজিনা ইসলামের সঙ্গে দেখা করে এসে তাঁর বোন সাবিনা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁর বোন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, আটকের পর তাঁর বোনের ব্যাগ কেড়ে নেওয়া হয়। তখন ব্যাগে কিছু ‘ডকুমেন্ট’ ঢুকিয়েও দিয়ে থাকতে পারে। রোজিনা ইসলামের শারীরিক অবস্থা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁর বোন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, রোজিনা ইসলাম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অনন্য। আন্তর্জাতিকভাবে তাঁর স্বীকৃতি আছে। এমন একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা অন্যায়, অনভিপ্রেত। কী কারণে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে, অসুস্থ হওয়ার পরও তাঁকে হাসপাতালে না নেওয়ার বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। রোজিনাকে হেনস্তা করার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে।