মেলবোর্ন প্রবাসী প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী সৈয়দা সায়েরার প্রতিষ্ঠান ‘নৃত্যভুবনের’ পৃষ্ঠপোষকতায়, প্রথমবারের মতো হয়ে গেল ‘মাল্টিকালচারাল ড্যান্স নাইট’। গত ১৮ সেপ্টেম্বরে আলটোনা সিটি থিয়েটারে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে নৃত্যভুবনের নিজস্ব শিল্পীরা ছাড়াও অংশগ্রহণ করেন বেশ ক’জন স্থানীয় নৃত্যশিল্পী এবং তাদের দল। নৃত্যভুবনের বাংলাদেশী প্রবাসী শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনাগুলোর কোরিওগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন সায়েরা। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভারত, নেপাল, ব্রাজিল, চায়না, এবং নিউজিল্যান্ডের বেশ কজন নৃত্যশিল্পী এবং তাদের দল। দর্শকদের মুগ্ধ করে ভরত নাট্যম, কত্থক, বলিউড ড্যান্স, ব্রাজিলিয়ান সাম্বা এবং নিউজল্যান্ডের আদিবাসী নাচসহ বেশ কিছু মনোমুগ্ধকর নাচের পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী, কোরিওগ্রাফার, অভিনয়শিল্পী এবং আন্তর্জাতিক মডেল সাদিয়া ইসলাম মৌ এবং তাঁর টিম। মৌ’র দুই প্রবাসী বন্ধু মিতু এবং তান্না- এই নিয়ে মৌ এবং টিম। বাংলাদেশের আরেক প্রখ্যাত নৃত্য শিল্পী কবিরুল ইসলাম রতনের কোরিওগ্রাফিতে উঠে আসে বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং বাংলার অপরূপ রূপের বর্ণনা। আপন শক্তিতে আলোকিত উদ্ভাসিত নারী শক্তি এবং মহিমা এমন থিমের উপরই ছিল মৌএবং তাঁর টিমের পরিবেশনা। মৌ এবং টিমের সাথে অনুষ্ঠানের শেষভাগে অংশ নেয় স্থানীয় নৃত্য শিল্পীরা।
অনুষ্ঠানটির পর অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টাল ‘প্রশান্তিকার’ সহযোগী সম্পাদক নাদেরা সুলতানা নদী কথা বলেছেন বাংলাদেশ থেকে উড়ে আসা মৌ’র সাথে। তারই কিছু অংশ থাকছে শুধু মাত্র প্রশান্তিকা পাঠকদের জন্যে।
প্রশান্তিকা : আমি প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে শুরুতেই আপনি ও আপনার টিমকে উষ্ণ অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ আমাকে এইটুকু সময় দেবার জন্যে। এটা কী অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম শো করতে আসা? কেমন লাগছে সব মিলিয়ে?
মৌ : অস্ট্রেলিয়াতে আমার এটা আমার প্রথম ট্যুর। মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়ায় এসে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে এই সময়ের ওয়েদার, সকলের আতিথেয়তা, বিশেষ করে আয়োজক নৃত্যভুবনের কর্ণধার সায়েরার আথিতেয়তা। সব মিলিয়ে অবশ্যই ভালো লেগেছে আমার এটাই বিশেষ ভাবে বলতে চাই।
(মৌ পরিবেশিত একটি নাচের ভিডিও দেখুন নিচে )
প্রশান্তিকা : এই ট্যুরে আপনার অভিজ্ঞতা এবং প্রাপ্তি নিয়ে কিছু বলবেন কী? আপনি কী সবটুকু তৃপ্ত শো করে?
মৌ : অভিজ্ঞতা এক কথায় অসাধারণ। প্রাপ্তি আসলে নির্ভর করছে দর্শক হিসেবে আপনি, আপনারা এবং আয়োজকরা যেমনটা আশা করেছিলেন তার উপর। কতোটুকু দিতে পেরেছি, তাঁরা বলবেন, আপনারা বলবেন। তবে আমি একজন শিল্পী হিসেবে সবটুকু তৃপ্ত কী হতে পারি? সেটা হলে পরে তো একজন শিল্পী হিসেবে আমার সবটুকু ঢেলে দেবার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা সেটাই থাকবেনা। আমি সব সময়ই মনে করি আরো ভালো কিছু করা যেতে পারে, করতে হবে। আমার সেরাটা হয়তো হয়ে উঠেনি এখনও।
প্রশান্তিকা : সাদিয়া ইসলাম মৌ, প্রকৃত শিল্পীর কাছে আমরাও তাই আশা করি। মৌ, আপনি একাধারে নৃত্যশিল্পী, মডেল এবং অভিনয় শিল্পী। বাংলাদেশে একটা লম্বা সময় ধরে রাজত্ব করেছেন বিজ্ঞাপনের জগতে, আপনার সময়ে আপনার খুব কাছাকাছি কোন নারী শিল্পী ছিলেননা বললেও ভুল হবেনা। আপনি উজ্জ্বল ছিলেন অভিনয়েও এবং আপনার আছে অসাধারণ কন্ঠস্বর, আমি ব্যক্তিগতভাবে যার খুব ভক্ত। যদি জানতে চাই, ব্যক্তিগতভাবে কোন পরিচয়টিতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বা সামনে নিয়ে আসতে চান, কী বলবেন?
মৌ : দেখুন আমি কিন্তু মডেলিং বা অভিনয় ওভাবে শিখিনি, আমার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলোনা। আমি ছোটবেলা থেকে যা শিখেছি তা হচ্ছে নাচ। নাচের সাথে আমার আশৈশব সম্পর্ক যা এখনও ধরে রেখেছি। আমি একজন নৃত্যশিল্পী এই পরিচয়টাই সবার আগে এবং আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি বলতে পারেন। নৃত্যশিল্পকে নিয়ে আমার আরও কাজ করার ইচ্ছে আছে।
প্রশান্তিকা : মৌ আপনি, বাংলাদেশের একজন স্বনাম ধন্য নৃত্যশিল্পী। অস্ট্রেলিয়াতে আপনি এবং আপনার টিম শো করতে আসছেন দেখে অনেকদিন পর আমরা প্রবাসী বাংলাদেশীরা বেশ উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। অনুষ্ঠান প্রচারণায় জানলাম আপনি এবং আপনারদুজন প্রবাসী বন্ধুকে নিয়েই এই টিম। তাঁদের সাথে মঞ্চ শেয়ার করেছেন এবং দর্শকদের উপহার দিলেন অসাধারণ কিছু পরিবেশনা, এইবিষয়টির সাথে যুক্ত হওয়া এবং আগামী কোন পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলবেন কী?
মৌ : ওরা আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। ফারহানা খান তান্না এবং রোজমেরী মিতু, দুজনই নাচের সাথে আছে এবং আমরা শো করেছি এক সাথে। নাচ ভালোবেসে দুজনই কাজ করে যাচ্ছে প্রবাসী জীবনেও। আমি আমার সবটুকু সহযোগিতার হাত নৃত্যশিল্পকে ঘিরে যে যেখান থেকেই কাজ করছে বা করতে চাইছে সব সময়ই বাড়িয়ে রাখি আমার সাথেযোগসূত্র হলে পরে। এই দুজন আমার বন্ধু, দুজনই এই কাজটা করে যাচ্ছেন তাদের শ্রম, মেধা সময় দিয়ে। আগামীতেও আমাদের আরো ভালো কিছু করার ইচ্ছে আছে, অবশ্যই এক সাথে।

প্রশান্তিকা : আপনার সাথে আরো লম্বা সময় কথা বলতে পারলে আমার খুব ভালো লাগতো, সে সুযোগ আমাদের ব্যস্ত সময়ে হয় উঠলোনা এবার। আজ সবশেষে যা জানতে চাইবো, একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ এবং দেশের বাইরে এই শিল্পের বর্তমান অবস্থান আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? বিশেষ কোন চ্যালেঞ্জের কথা বলবেন কী?
মৌ : বাংলাদেশে নৃত্যশিল্প বিশেষ করে স্বাধীনতা উত্তর সময় থেকে এইসময় পর্যন্ত রাহিজা খানম ঝুনু বলেন বা, লায়লা হাসান থেকে শুরু করে একজন শামীম আরা নীপা সবাইকেই আমি মনে করি, তাঁদের নিজ নিজসময়ে কোন না কোন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমি যেসময়টা থেকে কাজ করছি, তখন হয়তো অন্যরকম চ্যালেঞ্জ এসেছে, আমি সেটা মোকাবেলা করেই কাজটা করে যাচ্ছি। তবে আমি মনে করি একটা সভ্য সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে শিল্পের সকল মাধ্যমকে গুরুত্বের সাথে তুলে আনাটা খুব জরুরী। এবং এর মাঝে অবশ্যই নৃত্যশিল্প অন্যতম এক শিল্প মাধ্যম। আমি আশাবাদী মানুষ আমি সব সময়ই চেষ্টা করি আমার সবটুকু নিয়ে এই শিল্প চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং দেশের বাইরে আমি আমার বন্ধুদের কথা বলছিলাম তাঁরা কিন্তু ভালোবেসে নাচকে ধরে রেখেছে সীমাবদ্ধতা নিয়েই। এই যে এখানে নৃত্যধারার পরিচালক সায়েরা ওরাও কিন্তু অনেক রকম চ্যালেঞ্জ নিয়েই এই শিল্পকে ভালোবেসে এগিয়ে নিয়ে যাবার কাজটা করে যাচ্ছে। আমি যতদিন পারি তাঁদের পাশে আছি, থাকবো। আমি আশা বাঁচিয়ে রাখতে চাই, স্বপ্ন দেখতে চাই বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পকে নিয়ে।
প্রশান্তিকা : আপনার খুব মূল্যবান সময় থেকে আমাকে এবং প্রশান্তিকাকে এই সময় দেবার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
মৌ : আপনাকে এবং প্রশান্তিকার অসংখ্য পাঠককে আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
ছবি কৃতজ্ঞতা : Subir’s Photography.