
গত শনিবার থেকে এপর্যন্ত শুধু অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে ৩০০ জন। ভয়াল এই ভাইরাসে নিউ সাউথ ওয়েলসে আক্রান্ত হয়েছে মোট ৫৩৩ জন। সারা অস্ট্রেলিয়ায় দাঁড়িয়েছে ১৩১৫ জন।
আমার বসবাস নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের শহর সিডনিতে। আসছে মঙ্গলবার থেকে সম্পূর্ণ লকডাউনে যাচ্ছে নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়া। অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ রাজ্যেও চলছে লকডাউন। গৃহবন্দী থাকাটাই এসময়ের প্রকৃত প্রতিরোধ ব্যবস্থা। পরিবার নিয়ে যে যার মতো প্রবাসী বাংলাদেশীরাও গৃহবন্দী জীবন শুরু করছি। কতদিনের জন্য সেটা আল্লাহ মাবুদ জানেন।
গত ১০০ বছরে বিশ্বে ‘গুটি, স্প্যানিশ ফ্লু, এশিয়ান ফ্লু, এইডস, সোয়াইন ফ্লু ও ইবোলা’ এই ৬টি মহামারী ও ভাইরাস আক্রমণ করেছিল। ১৯০০ সালের ‘গুটি’তে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন এবং ১৯১৮-১৯ সালের ’স্প্যানিশ ফ্লু’তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল।
এছাড়াও ১৯৫৬ সালের এশিয়ান ফ্লুতে এক মিলিয়ন, ১৯৮১ সালের এইডস্ এ ১লক্ষ ৪০ হাজার, ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লুতে ১৮,৫০০ এবং ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এই পর্যন্ত বিশ্বে ১২ হাজারের অধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩ লাখেরও অধিক। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ভাইরাসটির কোনো ভ্যাকসিন না থাকায় ক্ষতির পরিমাণও ধীরে ধীরে বাড়ছে। মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত সংখ্যা ১৩০০ জনেরও অধিক এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ জন। তবে ইতালীর ভয়াবহ অবস্থা মানুষকে বেশী হতাশ করেছে। ইতালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় অর্ধ লক্ষ। মৃত্যু চার হাজারেরও অধিক।
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা কম হলেও করোনা ভাইরাস আজ পুরা দুনিয়ার এক আতংকের নাম। এর আগে কখনো সারা বিশ্ব এভাবে লকডাউন করা হয়নি। বিশ্ব অর্থনীতি এভাবে পঙ্গু হয়নি। কোটি কোটি মানুষ চাকরিচ্যুত হয়নি। সারা বিশ্বের পর্যটকদের উপর অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়নি।
আশা করি এই বিপদ আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো ইনশাআল্লাহ্। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের দেয়া পরামর্শ ও বিধি-নিষেধ মেনে চলতে চেস্টা করি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করি। বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য পাঁচবার ওজু করলেও হয়তো এই ভাইরাস আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারবেনা।
তবে সতর্কতা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সম্পর্কে ছোট্ট একটি উদাহরণ তুলে ধরলাম; ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া শহরে ইনফ্লুয়েন্জায় আক্রান্ত হয়েছিলো মাত্র একজন মানুষ। কর্তৃপক্ষ এটাকে তেমন গুরত্ব দেয়নি। একজন থেকে দশজন, দশজন থেকে একুশ জন। এই একুশজন হাজির হয়েছিলো একটি প্যারেড দেখতে। ছয়সপ্তাহের মাঝে আক্রান্ত হয় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ এবং আক্রান্তের ৭০% মানুষ মারা যায়।
এরপর আমেরিকার সেন্ট লুইস শহরে প্রথম রোগী আসার সংবাদ শুনার সাথে সাথেই কর্তৃপক্ষ এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। চিকিৎসা এবং শহর নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী ছাড়া সব মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া ,মানুষের সাথে মানুষের যাবতীয় মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। এই শহরে মানুষ মারা গিয়েছিলো মাত্র ৭০ জন।একটা ভুল সিদ্ধান্তে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যেতে পারে। একটা ভালো সিদ্ধান্তে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেঁচেও যেতে পারে।
হতাশ ও অধৈর্য না হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করি। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর নিজের সবকিছু সমার্পণ করি। এই মহামারীতে আমরা একে অপরকে সাহায্য করি। পরম করুনাময় মহান আল্লাহ্ই আমাদেরকে এই করোনা ভাইরাসের মহামারী থেকে মুক্ত করবেন ইনশাআল্লাহ।
অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের জন্য আমার বিশেষ অনুরোধ; আমরা যেন খাদ্য এবং টয়লেট পেপারের জন্য হতাশ না হই। অস্ট্রেলিয়া ফুড এ্যান্ড গ্রোসারী কাউন্সিলের উপ-প্রধান ড. এনিসন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ২৫ মিলিয়ন কিন্তু খাদ্য উৎপাদিত হয় ৭৫ মিলিয়নের। এছাড়াও তিনটি প্রধান কোম্পানী টয়লেট পেপার উৎপাদনে সাত দিন ২৪ ঘন্টা কাজ করছে। অতএব খাদ্য এবং টয়লেট পেপারের জন্য হতাশ হওয়ার কেন কারণ নেই।
মোহাম্মাদ আব্দুল মতিন
সাংবাদিক, সম্পাদক: বিদেশবাংলা
সাধারন সম্পাদক: সিডনি প্রেস এন্ড মিডিয়া কাউন্সিল।