প্রশান্তিকা রিপোর্ট : ভাষার মাস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সিডনিতে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রোববার এশফিল্ডের হেরিটেজ পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভের পার্শ্ববর্তী স্থানে আয়োজিত ২৪ তম দিনভর গ্রন্থমেলায় থাকবে প্রভাতফেরী, আলোচনা, মোড়ক উম্মোচন, চিত্রকলা প্রদর্শনী, রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানাবিধ কর্মসূচি। মেলাটির আয়োজক একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া। এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রকাশক ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড(ইউপিএল) ও তাদের বুকস্টল।

প্রভাতফেরী
আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি- অমর এই গানটির সঙ্গে সঙ্গে নারী পুরুষ সকলে নির্বিশেষে প্রভাতফেরীতে অংশ নেয়। এটি পার্কে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ থেকে শুরু হয়ে পুরো পার্ক ঘুরে এসে আবার কেন্দ্রে শেষ হয়। তারপর সকলেই ভাষা শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এতে অংশ নেয় প্রবাসের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও তাদের অঙ্গসংঠন। এবছর অন্যান্যদের সাথে প্রভাতফেরীতে অংশ নিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন এবং ভিকারুন্নিসা এলামনাই অস্ট্রেলিয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাইয়ের সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ ও সেক্রেটারি মাহমুদুল হক বাদল সাক্ষরিত এক বার্তায় সকল এলামনাইকে সকাল ৯টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। ভিকারুননিসা এলামনাই-এর প্রেসিডেন্ট ডাঃমাহবুবা খানম মুক্তা ও জেনারেল সেক্রেটারী ডাঃ সুরঞ্জনা জেনিফার রহমান জানিয়েছেন, আগামী ১৯ই ফেব্রুয়ারি এশফিল্ডে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণে আয়োজিত বইমেলা ও প্রভাতফেরীতে ভি এ অস এলামনাইয়ের সদস্যরা শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পন করতে যাচ্ছে সকাল ৯ ঘটিকায়।
সংগঠনের পক্ষ থেকে সকল ভিকারুননিসা এলামনাইবৃন্দকে অংশগ্রহণের আহবান করা হয়েছে।

বইমেলা
একুশে মেলার প্রধান আকর্ষণ বইমেলা। সিডনির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিক্রয়কেন্দ্র বইয়ের পশরা সাজিয়ে বসেন। প্রশান্তিকার সাথে এক আলাপে একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে নেহাল নেয়ামুল বারী বলেন, “ প্রতি বছরের মতো এবারও এখানকার প্রতিষ্ঠান বইয়ের স্টল দিচ্ছেন। তবে এবারের আরেকটি আকর্ষণ হলো- ঢাকা থেকে আসছেন স্বনামধন্য এক প্রকাশনী ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ও তাদের স্টল। এতে করে প্রবাসে থাকা পাঠকেরা সরাসরি তাদের বই ক্রয় করতে পারবেন।” জানা গেছে, এবার মেলায় বইয়ের স্টল দিচ্ছেন প্রশান্তিকা বইঘর, মুক্তমঞ্চ, মেরুদণ্ড, অবন্তিকা প্রকাশনী, বর্ণালী বুকস, ইকরি মিকরি, মিশুক পাবলিকেশন্স, বাংলাদেশের নামকরা প্রকাশনার স্টল সহ আরও অনেকে।

প্রশান্তিকা বইঘরের কর্ণধার আতিকুর রহমান শুভ বলেন, “প্রশান্তিকা এবারও ঢাকা অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সদ্য প্রকাশিত জনপ্রিয় ও সৃজনশীল লেখকদের বইসহ আলোচিত বইগুলো মেলায় আনছে। প্রশান্তিকায় এবারও থাকছে বাংলাদেশের নামকরা প্রকাশক অন্যপ্রকাশ, পাঞ্জেরী, বাতিঘরের অনেকের বই। পাঞ্জেরী, অন্যপ্রকাশ এবং বাতিঘরের বৃহৎ কালেকশনের বই প্রশান্তিকার মাধ্যমেই অস্ট্রেলিয়ায় বিপনন হয়। সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি এক প্রশান্তিকা বইঘরেই তাদের মতো বড় প্রকাশনীর বইয়ের বড় সমারোহ হয়ে থাকে।”
সিডনিবাসী লেখক অজয় দাশগুপ্ত ( শিশু কিশোরদের কবিতার বই- মন ও মাঠে স্বপ্ন হাটে) , আবুল হাসনাৎ মিল্টন (উপন্যাস- নুসরাত), আল নোমান শামীম(কবিতা- কোন এক আপন জ্যোৎস্নায়, সম্পাদনা- বাঙালির বটবৃক্ষ), নিরুপমা রহমান ( প্রবন্ধ ), আরিফুর রহমান ( উপন্যাস- আমাদের ঠিকানা বদলে গেছে ), ইসহাক হাফিজ ( উপন্যাস- অর্ধেক মানুষ), রাজভী সাহা ( কবিতা ও গল্পগুচ্ছ- ভাবনার নীল সমুদ্রে)- এর নতুন বইসহ অনেক লেখকের বই থাকবে। বইগুলো বিভিন্ন বিপনন স্টলে থাকবে বলে আয়োজকেরা জানান।

চিত্রকলা প্রদর্শনী
একুশে একাডেমী অস্টেলিয়া এই গ্রন্থমেলায় গত ২৫ বছরের মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের ছবি প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে। যা সৃষ্টি করেছেন আশীষ ভট্টাচার্য। এছাড়া শিশুদের তিন বিভাগ থেকে উত্তীর্নদের চিত্রাংকন স্থান পাবে। পাশাপাশি নির্বাচিত শিল্পীদের ছবি স্থান পাবে।
আলোকচিত্র প্রদর্শনী
পেন্সিল অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে অস্ট্রেলিয়াবাসী নামকরা বাংলাদেশী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বাদল, সরকার কবির উদ্দিন, এডওয়ার্ড অশোক অধিকারী, বিপুল রায়, মিজানুর রহমান মুকুল, তুমন আহসানসহ প্রায় তিরিশজন পেশাদারী ও এমেচার আলোকচিত্রীর ছবি থাকবে এবারের গ্রন্থমেলায়। গতবছর এই বিভাগটিতে প্রচুর দর্শক সমাগম হয়েছিলো।

এছাড়া মঞ্চে সারাদিন ব্যাপী কবিতা আবৃত্তি, গান, নাটক, প্রবাসী লেখকদের নতুন বইয়ের মোড়ক উম্মোচন, আলোচনা অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।

সিডনি একুশে বইমেলাটি আন্তর্জাতিক মাকৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সঙ্গত কারণেই এখানে অস্ট্রেলিয়ায় মেইনস্ট্রিম রাজনীতিবীদ, মন্ত্রী, এমপিরা অংশ নেন। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশী নেতা, কাউন্সিলর ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেন। অসংখ্য বইপ্রেমী দর্শকেরা সারা বছর অপেক্ষা করেন অমর একুশের এই আয়োজনের জন্য। মেলায় হরেক রকমের খাবারের স্টল, শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে।