প্রশান্তিকা ডেস্ক: ফাগুন হাওয়া আয়োজিত “ডাটা ফেয়ার বৈশাখী আড্ডা ১৪২৮” ছিলো এই বছরে সিডনির বৃহৎ বৈশাখী আয়োজন। গত ১১ এপ্রিল রোববার সিডনির বেক্সলি ম্যানোর ফাংশন সেন্টারে বাঙালি ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে বর্ণাঢ্য আয়োজনে অতিথিদের আগমন হয়।
ফাগুন হাওয়া’র সভাপতি তিশা তাসনিম তানিয়া প্রশান্তিকাকে জানান, করোনার বিধিনিষেধ মেনে প্রথমে ২০০ জনের অতিথি সমাগমের কথা থাকলেও পরবর্তীতে নিয়ম নীতির শিথিলতা ও পরিবর্তন হওয়ার পরে কিছু মানুষের আসন বাড়ানোর ঘোষনা দেওয়ার পর পরই অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ায় এক পর্যায়ে ঘোষনা করা হয় সব টিকেট শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তার পরও কিছু অনুরোধ রাখতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ৩৮৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৭৭ জন শিশু নিয়ে অনুষ্ঠানটা সমপন্ন হয়।
প্রায় চার ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন
বাসব রায়, মাসুদা জাহান ছবি এবং অনুরিতা মজুমদার। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি ও বাঙ্গালি সংস্কৃতির প্রদর্শণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান চলতে থাকে। নৃত্যে অংশগ্রহন করেন মৌসুমী সাহা ও তার দল এবং আনুভা ও আদ্রিতা রায়। কবিতা আবৃত্তি করেন সহিদুল আলম বাদল, আকিদুল ইসলাম, ফাইজুন নাহার পলি, দেবী সাহা, পুরবী পারমিতা ঘোষ, মোশতাক আহমেদ ও আরিফুর রহমান। রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন পলশ্রী রায়। দেহতত্ত্ব গানে মন মাতিয়েছেন নামিদ ফারহান এবং আয়েশা কলি। সবশষে সিডনির জনপ্রিয় ব্যান্ড “কৃষ্টি” পরিবেশন করেন বৈশাখের গান সহ বাংলাদেশের জনপ্রিয় কিছু গান। পুরো অনুষ্ঠানে সাউন্ড সিস্টেমসের দায়িত্বে ছিলেন সঞ্জয় টাবু, ক্যামেরায় নুর মিশু (গোল্ড ডাস্ট)।
তিশা তানিয়া বলেন, সিডনির ইতিহাসে এই প্রথম প্রায় ৪০০ জনের জন্য গরম গরম ইলিশ মাছ ভ্যেনুতে ভেজে পরিবেশন করা হয়। বাকি খাবার অতিপরিচিত রকডেলের ফুসকা হাইজ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও হরেক রকম পিঠা ,মিস্টি ,দধি ,চিড়া ,খই ,নাড়ু ,মুরি মুডকী মোরালী ,ফুসকা সহ বাংলাদেশী মজাদার ও ঐতিহ্যপুর্ন বিভিন্ন খাবারের সমাহার ছিল। বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ভাবে পোলাও ,রোস্ট ,ডিম,চিপস ও সুসজ্জিত ফ্রুটস প্লাটার পরিবেশন করা হয়।
বৈশাখী আড্ডায় আগত অথিতীদের আনন্দ এবং বৈশাখীর সৌন্দর্য ও পরিপূর্ন আমেজ ফুটিয় তোলার জন্য হলের সামনে স্টল বসানো হয়। যেখানে বাচ্চাদের খেলনা ও বড়দের বিভিন্ন বাঙ্গালী পোষাক বিক্রি করা হয়। বৈশাখী আড্ডার বিশেষ আকর্ষণ অতিথিদের জন্য Raheel’s make-up worlds এর পক্ষ থেকে ফ্রি পান-সুপারীর ব্যবস্থা ছিল।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে স্পনসরা মঞ্চে এসে তাদের মূল্যবান অনুভূতির কথা বলেন। তারা বলেন, মনে হচ্ছে তারা বাংলাদেশে বসে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করছেন। তারা সবসময় ফাগুন হাওয়ার পাশে থাকার অভিমত ব্যক্ত করেন। টাইটেল স্পনসরের কর্নধার আলমগীর ইসলাম বাবু বলেন, ফাগুন হাওয়ার মতো এত সুন্দর একটা আয়োজনের অংশ হিসেবে থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
সভাপতি তিশা তানিয়া জানান, অনুষ্ঠানটির টাইটেল স্পনসর ডাটা ফেয়ার সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হল- Data Fair -title sponsor( Alamgir Islam Babu), Tm Alliance motors ( Bahlul Alam ), Global accounting (Joarder Hossain), Mother Earth ( Sukanata Paul), Raheel’s makeup worlds( Hema Rezwan), G Learn, Optus Rockdale ( Harry Takyar), Parish Patience ( Motasim Billah), Person vue authorized Center ( ziaul kabir), Ananda sweets and Bekery ( Tonni kabir) এবং ব্যক্তি উদ্যোগে সহযোগিতা করেছেন মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন, মিল্টন আহমেদ, শফিক চৌধুরী (SBX money transfer organisation) এবং মোহাম্মদ আলম।
বৈশাখী আড্ডা ১৪২৮ উদযাপনের জন্য
“ফাগুন হাওয়া”এর পক্ষ থেকে ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি বৈশাখী টিম গঠন করা হয় । তারা হলেন তিশা তাসমিম তানিয়া, সাজেদা আক্তার সানজিদা, ফারুক খান, নাজমুল হক, মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন, সুকান্ত পাল, মোহাম্মদ এনামুল, বেলায়েত হোসেন, হেমা রেজওয়ান, ফাতেমাতুস জহুরা তমা, সাইদ রিয়েল, সাবাবা ইয়াছমিন।
এছাড়াও অনেকেই অনুষ্ঠানকে সাফল্য মন্ডিত করার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মাহফুজ আহমেদ, ফকরুল রিয়া, পি এস চুন্নু, আফরিনা চৌধুরী, পুরবী পারমিতা ঘোষ, সান্তনু বিশ্বাস, আসরাফুল লাবু, সহিদুল ইসলাম সরকার, আবদুস সালাম প্রমুখ।
প্রতিবারের মত এবারও সাবেক কাউন্সিলর শাহে জামান টিটু ফাগুন হাওয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থেকে অনুষ্ঠানটিকে সুন্দর ও সফল করার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।
সভাপতি তিশা তানিয়া বলেন “ফাগুন হাওয়া” একটি অরাজনৈতিক এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং এবছর প্রথম বারের মত বাংলা নতুন বছর বৈশাখ উদযাপনে বাংলাদেশী ছাড়াও ভারতীয় বিশেষ করে কলকাতার বাঙালি ও নেপালীরাও অংশগ্রহন করেন। তিনি আরও বলেন আমাদের বাঙ্গালি ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সাথে সবদেশীয় মানুষকে পরিচিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
সবশেষে ফাগুন হাওয়ার সাধারন সম্পাদিকা
সাজেদা আক্তার সানজিদা আগামী বছরে আবার বৈশাখী আড্ডা আয়োজনের আশা ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।