প্রশান্তিকা রিপোর্ট: সিডনির প্রাণকেন্দ্র আ্যশফিল্ড পার্কে অমর একুশে স্মরণে নির্মিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতি স্তম্ভের পাদদেশে দিনব্যাপী বইমেলা আয়োজন ও শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। আয়োজক একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার আহবানে বৈরী আবহাওয়ার সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করে গত ২৩শে ফেব্রুয়ারী রোববার অসংখ্য প্রবাসী বাঙালীরা মিলিত হয়েছিলেন পার্কে। এটি ছিলো সিডনিতে একুশে একাডেমীর ২২তম একুশে বইমেলা এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

‘একুশ বাঙালী চেতনার কেন্দ্রবিন্দু, একুশ আমাদের স্পর্ধিত সাহস’ শ্লোগানে মুখর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভাষা স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করে। একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে একুশের প্রভাতফেরী শুরু হয় সকাল ৯টা ২২ মিনিটে। সংগঠনের সকল সদস্যসহ এই প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করে সিডনির প্রায় ২৩ টি সংঠনের নেতা কর্মী ও সর্বসাধারণ। চারশ’ মানুষেরও অধিক মানুষ এই প্রভাতফেরিতে অংশ নেয়। এসময় প্রবাসের সংবাদপত্র, টেলিভিশন, ইলেকট্রনিকসহ বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রভাতফেরীতে একুশের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি..’ উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই যেন সবাই জেগে ওঠে নব উদ্দীপনায়। প্রভাতফেরী শেষ হওয়ার পর শুরু হয় সিডনির প্রখ্যাত শিল্পী ও সাংস্কৃতিকদের নিয়ে মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানমালা।

একুশে একাডেমী মেলার মূল আকর্ষণ ছিলো নানা রকম বইয়ের পসরা। মুক্তমঞ্চ প্রকাশন, প্রশান্তিকা বইঘর, পিদিম পাঠাগার, মেরুদণ্ড, আনন্দধারা, তিতাস, প্রজন্ম সহ নানা নামের বইয়ের দোকান ছিলো। প্রবাসী পাঠকেরা তাদের চাহিদা মত বই ক্রয় করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে এদিন বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইনের বই বিক্রয় শীর্ষে ছিলো। তাঁর নতুন উপন্যাস অর্ধবৃত্ত, মরনোত্তম, মেঘেদের দিন, ছদ্মবেশ সহ পুরনো বইগুলোও বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নতুন বই ‘আমার দেখা নয়াচীন’, আসীফ এন্তাজ রবী’র ‘পূর্বপুরুষ’, কিঙ্কর আহসানের ‘মেঘডুবি’, লুৎফর হাসানের ‘জারুলবনে রক্তজবা’, আনিসুল হকের ‘এখানে থেমোনা’ সহ অসংখ্য নতুন প্রকাশিত বই বিক্রি হয়েছে।

প্রবাসী লেখকদের মধ্যে আবুল হাসনাত মিল্টনের ‘এতো ভালো তুমি নাও বাসতে পারতে’, আল নোমান শামীমের ‘সাদা শাড়ির পাড় জুড়ে নুপূরের শব্দ’ এবং ‘প্রশান্ত পাড়ের কবি ও কবিতা’, আরিফুর রহমানের ‘দহন দিনের গান’, অনীলা পারভীনের ‘অস্ট্রেলিয়ার উপকথা’, এস এম আমিনুল ইসলামের ‘গল্প হলেও পারতো’, ইসহাক হাফিজের ‘আকর্ষী’ সহ নজরুল ইসলাম শেখ, অরুন মৈত্র, আশীষ বাবলু, সঞ্জয় দে এবং শাহনাজ পারভীনের নতুন বই পাঠকেরা সংগ্রহ করেছেন।

সকালে অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিলো শিশুদের পরিবেশনায় সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কনসাল জেনারেল খন্দকার মাসুদুল আলম ও একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ডঃ স্বপন পাল। আলোচনা সভায় সন্মানিত বক্তারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব, কর্মতৎপরতা এবং অনাগত সময়ে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত সে বিষয়গুলো তুলে ধরেন। অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কনসাল জেনারেল খন্দকার মাসুদুল আলম, যাঁরা একুশে একাডেমীর পক্ষে রক্তদান করেন তাদেরকে ফুল দিয়ে সন্মান প্রদান করেন এবং অভিনন্দন জানান। এবারের মেলার মূল সহযোগিতাকারী ‘প্রভাত ফেরী’র সম্পাদিকা শ্রাবন্তী কাজী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ও ভবিষ্যতে আরো সহযোগতিার আশ্বাস দেন।

একুশের মঞ্চে এবার সিডনিবাসী ১০ জন কবি-সাহিত্যিকের গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন করা হয়। দশ লেখক ও কবি অনীলা পারভীন, আরিফুর রহমান, নজরুল ইসলাম শেখ, অরুন মৈত্র, আশীষ বাবলু, সঞ্জয় দে, ডঃ আবুল হাসনাত মিল্টন, ইসহাক হাফিজ, শাহনাজ পারভীন এবং আল নোমান শামীম সহ প্রত্যেককে একুশে একাডেমী ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন নেহাল নেয়ামুল বারী। একুশে একাডেমীর নিজস্ব শিল্পীদের পরিবেশনায় গান ও আবৃত্তি ছিলো মুগ্ধকর। শিশুদের চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতার পর্বটি পরিচালনা করেন পটুয়া ও লেখক আশীষ বাবলু। তিনি বিজয়ী শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

মেলায় প্রবাসী শিল্পীদের চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ছিলো। আগত দর্শকেরা বই ও খাবারের দোকানের সারিতে স্থাপিত চিত্র প্রদর্শনী উপভোগ করেন। প্রবাসী শিল্পী মিঠু ও রফিকের আঁকা বিভিন্ন ফর্মের ছবি স্থান পায় প্রদর্শনীতে।
এবারের বইমেলায় দর্শকের উপস্থিতি ছিলো আশাতীত। উপচে পড়া মানুষের ভীড়ে এ্যাশফিল্ড পার্ক হয়ে উঠেছিলো বাংলার পরিচিত আঙিনা। যেন পরিচিত একুশ মেলার প্রবাসী রূপ। অনুষ্ঠানে আগামী বছরের একুশে বইমেলার তারিখ ঘোষণা করা হয়, আর সেটি হচ্ছে ২১শে ফেব্রুয়ারী রবিবার ২০২১।