সিডনিতে সাংবাদিক সাদ্দাম খান স্মরণে শোকগাঁথা

  
    

প্রশান্তিকা রিপোর্ট : সদ্য প্রয়াত সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক, ইয়েস টিভির কর্ণধার সাদ্দাম খান স্মরণে গতকাল ৩০ জানুয়ারি সোমবার লাকেম্বায় এক শোক ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সভাটির আয়োজনে ছিলো অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ প্রেস ও মিডিয়া ক্লাব। সাদ্দামের মৃত্যুতে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সাদ্দাম খান
শোক সভার শুরুতে দোয়া ও মোনাজাত করেন সংগঠনের ট্রেজারার নবধারা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। সঞ্চালনা করেন কথাসাহিত্যিক ও লেখক ড. শাখাওয়াৎ নয়ন। শোক বিহবল সকল সাংবাদিক ও বক্তা প্রয়াত সাদ্দাম স্মরণে কথা বলেন। এসময় অনেকেই কেঁদে ফেলেন।
আবুল কালাম আজাদ
প্রয়াত সাদ্দাম খান এই প্রবাসে তার পরিচালিত ইয়েস টিভির মাধ্যমে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলা সরাসরি ফেসবুকে সম্প্রচার করে একটি নতুন দিগন্ত উম্মোচন করেছেন। সাদ্দাম সম্পর্কে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর বন্ধু ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড় আলী আশরাফ হিমেল আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “ সাদ্দাম তাঁর ইয়েস টিভির মাধ্যমে সারাদিন ব্যাপী ক্রিকেট টুর্নামেন্টের খেলাগুলো প্রচার করতেন। সাদ্দাম ছিলেন সাদা মনের মানুষেরও অধিক ভালো মানুষ। মৃত্যুর পরের দিন তাঁর জন্য লাকেম্বা মসজিদে গায়েবানা জানাজায় প্রায় দেড় শতাধিক তরুণ সেদিন ক্রিকেট ম্যাচ বাদ দিয়ে উপস্থিত হয়েছিলো। এই ভালোবাসা অনেক বড় রাজনীতিক মারা গেলেও পাওয়া যায়না।”
আলী আশরাফ হিমেল
জন্মভূমি টিভির কর্ণধার সিনিয়র সাংবাদিক আবু রেজা আরেফিনও আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, “ আমি তাঁর অগ্ন্যাশয় অসুখটার কথা জানতাম। এমনকি এবার দেশে থেকে আসার পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে সাদ্দামকে নিয়ে  যাবার কথা ছিলো। আল্লাহ তাঁর আগেই তাকে নিয়ে গেলেন।”
আবু রেজা আরেফিন
সিডনি বেঙ্গলী সম্পাদক আবু তারিক বলেন, “ আমি সাদ্দামের মৃত্যু সংবাদ শোনার পরে বাসায় গিয়ে আমার ক্রিকেট খেলোয়াড় ছেলের কাছেও শুনেছি। অর্থাৎ সাদ্দামকে সকলেই কোন না কোন ভাবে চিনতো।”
আবু তারিক
প্রশান্তিকা সম্পাদক আতিকুর রহমান শুভ বলেন, “ সাদ্দাম কেবল ক্রীড়ামোদী ছিলো না, সাংবাদিকতার নানা বিভাগে ওর চিন্তা ছিলো কীভাবে তার ভিডিও ফরমেট করা যায়। তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিলো তাঁর নিজস্ব একটা স্টুডিও হবে। সেখান থেকে টক শো, গান বা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। সিডনিবাসী লেখকদের বলতো- গল্প রেডি করেন নাটক বানাবো ! সে অনেক কিছুই করতে চেয়েছে হয়তো এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে বলেই।”
আতিকুর রহমান শুভ
লেখক ও কথাসাহিত্যিক ড. শাখাওয়াৎ নয়ন বলেন, “ সাদ্দামের মৃত্যুর খবর শোনার পরে আমি স্বাভাবিক হতে পারছিনা। বারবার ওর কথা ওর হাসি মনে পড়ছে। সিডনিতে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন এলে তাকে নিয়ে অপেরা হাউজের পাদদেশে একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। ওটার পুরো কাজটাই করেছিলো সাদ্দাম। আমাকে অনেকদিন ধরে বলছিলো- নয়ন ভাই একটা গল্প লেখেন, নাটক বানাবো। শুধু আমাকে নয় অনেককেই সে বলেছিলো। কেবল খেলা নয় অন্য অনেক কিছু করার ইচ্ছে ও সামর্থ্য ছিলো সাদ্দামের। শুধু সময়টা পেলো না। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।”
শাখাওয়াৎ নয়ন
লেখক ও শিশুসাহিত্যিক অনীলা পারভীন বলেন, “ আজ খুব কষ্ট লাগছে এই মনে করে যে সাদ্দামের মতো স্বপ্নবান একজন মানুষ এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। আমাদের সবার স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।”
অনীলা পারভীন
রাজনীতিবীদ ও লেখক শফিকুল আলম বলেন, “ সাদ্দাম খুব সঙ্গোপনে কাজ করে গেছেন। তিনি সকলকে তুলে ধরেছেন কিন্তু নিজেকে প্রকাশ করতেন না। এরকম একজন মানুষ সমাজে বিরল। তাঁর অকাল মৃত্যু মেনে নেবার মতো নয়।”
শফিকুল আলম
সাংবাদিক আকাশ দে বলেন, “ হিমেলের মাধ্যমেই আমার সাথে সাদ্দামের পরিচয় হয়। তারপর প্রায় দুই বছর আমিও ইয়েস টিভির সাথে যুক্ত ছিলাম। সাদ্দাম এভাবে চলে যাবেন কখনই ভাবিনি। আমাদের দায়িত্ব হবে তাঁর রেখে যাওয়া পরিবারের জন্য মানসিক ও অন্যান্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। আরেকটা বড় কাজ হবে যদি তাঁর প্রিয় বিভাগ ক্রিকেটের জন্য তাঁর নামে একটি ট্রফি কিংবা টুর্নামেন্ট চালু করা যায়। তাহলে ওনাকে আমরা সবসময় স্মরণে রাখতে পারবো।”
আকাশ দে
সাংবাদিক বেলাল হোসাইন বলেন, “ সাদ্দামের বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া করবো। আর ওর রেখে যাওয়া কাজ ও মানুষদের জন্য অবশ্যই আমাদের কিছু করতে হবে।”
বেলাল হোসাইন, ফয়সাল আজাদ, মুস্তাফিজুর রহমান।
লেখক ও সাংবাদিক কাজী সুলতানা শিমি বলেন, “ আমার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে সাদ্দামকে মাত্র কিছুদিন আগে দেখতাম ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভিডিও করছে, ভ্লগ বানাচ্ছে, আজ তাকে নিয়ে আমরা শোক সভা করছি। অমরা যেনো এরকম পরিস্থিতিতে একে অপরের কাছে এসে দাঁড়াতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে।
কাজী সুলতানা শিমি
প্রবাসবাংলা সম্পাদক ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইউসুফ টুটুল বলেন, “সাদ্দামের মতো ১০ বছরের ছোট এক ভাইকে নিয়ে আজ এভাবে কথা বলতে হবে কখনই ভাবিনি। সিডনিতে ওর সাথে প্রথম দেখাতেই তাকে আমার ভালো লেগেছিলো। সেই ভালো লাগা কখনই কমেনি বরং বহুগুণে বেড়েছে। শুধু ক্রিকেট নয় আমাদের এক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টেও সাদ্দাম এগিয়ে এসেছে এবং তাঁর টিভিতে প্রচার করেছে। এমনকি সেটা নিয়মিত করার জন্য সে ব্যাডমিন্টনের একটি ভিডিও সফটওয়্যারও সংগ্রহ করছিলো।“
ইকবাল ইউসুফ টুটুল
সংগঠনের সভাপতি রহমত উল্লাহ বলেন, “ ঢাকায় গিয়ে সাদ্দাম অসুস্থ্য হয়েছে শুনেছি কিন্তু কখনই ভাবিনি সে এভাবে চলে যাবে। ওর অকাল মৃত্যু খুব বেদনাদায়ক। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করি।”
রহমত উল্লাহ
বক্তারা সাদ্দাম স্মরণে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বা কোন ট্রফি প্রবর্তনের প্রস্তাবনা করেন। এসময় হিমেল জানান, তারা ইয়েস টিভিকে বাঁচিয়ে রাখার পরিকল্পনা করছেন। এমনকি তাঁর পরিবারের জন্য মানসিক ও অন্যান্য সহযোগিতার আহ্বান জানান এবং এ ব্যাপারে সকলে একমত হন।
শোক ও স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি রহমতউল্লাহ, এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইউসুফ টুটুল, উপদেষ্টা আবু রেজা আরেফিন ( কর্ণধার, জন্মভুমি টিভি), সহ সভাপতি শফিকুল আলম (বাংলাকথা), কলামিস্ট কাজী সুলতানা সিমি ( ভোরের কাগজ), সাধারন সম্পাদক , ইকবাল ইউসুফ টুটুল (সম্পাদক, প্রবাসবাংলা), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ড. শাখাওয়াত নয়ন (কলামিস্ট), কোষাধ্যক্ষ, আবুল কালাম আজাদ খোকন (সম্পাদক নবধারা নিউজ), সাংগঠনিক সম্পাদক- আকাশ দে (আরটিভি), গণসংযোগ সম্পাদক, বেলাল হোসাইন (সম্পাদক নিউজ এস ২৪.কম), সম্পাদক আবু তারিক (সিডনি বেঙ্গলিজ), মুস্তাফিজুর রহমান ( ফটো সাংবাদিক) , আতিকুর রহমান শুভ ( সম্পাদক, প্রশান্তিকা), অনিলা পারভিন ( লেখক ও কলামিস্ট) প্রমুখ।
উল্লেখ্য, সাদ্দাম খান গত ২৮ জানুয়ারি শনিবার ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তান রেখে গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিলো  ৩৮ বছর।
সাদ্দাম খান বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়ে দুই সপ্তাহ আগে অগ্ন্যাশয় ইনফেকশন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর বাবা ২০১৫ সালে মারা যান। সাদ্দামকে ঢাকায় দাফন করা হয়েছে।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments