প্রশান্তিকা রিপোর্ট: সিডনির অদূরে মাছ শিকার করতে গিয়ে উত্তাল প্রশান্ত মহাসাগরে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন দুই বাংলাদেশী যুবক। গতকাল পোর্ট ক্যাম্বেলার হিল সিক্সটি লুকআউটে মাহাদী খান (৩৩) এবং মোজাফ্ফর আহমেদ (৪২) অন্যান্যদের সঙ্গে মাছ শিকার করছিলেন। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে তারা ভেসে যান। ঘটনাস্থলে মাহাদী খান এবং হাসপাতালে নেয়ার পরে মোজাফ্ফর মারা যান (ইন্না লিল্লাহি …..রাজেউন)। তারা দুইজনেই সিডনির বাংলাদেশী অধ্যুসিত লাকেম্বায় বাংলাদেশী গ্রোসারী শপে কাজ করতেন। খুব সজ্জন দুই যুবকের মৃত্যুতে সিডনির বাংলাদেশী কমিউনিটিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত দুই যুবকের শোকে অসংখ্য প্রবাসী লাকেম্বায় জড়ো হন।

গতকাল রাত ১১টার দিকে পুলিশ মাহাদীর লাকেম্বা বাসায় এসে তাঁর মৃত্যুর খবর জানান। খবর শুনে মাহাদীর বাবা অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং তাঁর মা পুত্রের শোকে গগণবিদারী আহাজারি করেন। মাহাদীর বাবার জন্য পুলিশ এম্বুলেন্স ডাকে। এসময় তাকে জরুরী চিকিৎসা দেয়া হয় এবং হাসপাতালে পাঠানো হয়। এসময় প্রশান্তিকার এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নে পুলিশ জানান, মাহাদী ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় অন্য একজনকে (মোজাফ্ফর) উলংগং হাসপাতালে নেয়া হয় এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানান, মাহাদীর সাথে আইডি থাকায় তাঁর মৃত্যু সংবাদ নিয়ে তারা লাকেম্বার বাসায় আসেন। অন্যজেনর কাছে কোন আইডি ছিলো না। পরে তাঁর নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে পুলিশ তাঁরও মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করে। দুটি লাশই ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তারপরই তাদের জানাজা ও দাফনের তারিখ জানানো হবে।
মাহাদী খান লাকেম্বায় তাঁর বাবা, মা’র সাথে বাস করতেন। মৃত্যুকালে তিনি বাবা, মা এবং একমাত্র বোনকে রেখে গেছেন। মাহাদী বছর খানেক আগে বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে করে আসেন। তাঁর স্ত্রী এখনো বাংলাদেশে। তিনি লাকেম্বায় বুচারি ও গ্রোসারি শপে কাজ করতেন। মৃত্যুর আগে তিনি পারিবারিক ব্যবসা ‘মাহী হালাল বুচারি’ এবং ‘ঘরোয়া কিচেন’ দেখাশোনা করতেন। তিনি সিডনি এয়ারপোর্টে সিকিউরিটির চাকুরীও করেছেন। সদা হাস্যময় মাহাদী সকলের প্রিয়ভাজন ছিলেন। তিনি খুব ধার্মিক ছিলেন এবং সকল সময় মাথায় টুপি পরে থাকতেন। তাঁর দেশের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে।

মোজাফ্ফর আহমেদ বাংলাদেশী অধ্যুসিত ওয়ালি পার্কে বাস করতেন। তিনি লাকেম্বায় বাংলাদেশী গ্রোসারি শপে কাজ করতেন। তিনিও মিশুক ছিলেন এবং সকলের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করতেন। তাঁর দেশের বাড়ি ফেনিতে। লাকেম্বায় শপিং করতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশী সকলেই মাহাদী এবং মোজাফ্ফরকে চেনেন। তারা দুজনেই খুব মিশুক এবং সজ্জ্ন ছিলেন।
চ্যানেল নাইন নিউজ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে উদ্ধার কারীরা হেলিকপ্টার ও এম্বুলেন্স নিয়ে ঘটনাস্থল পোর্ট ক্যাম্বেলায় উদ্ধার চালায়। এর আগে অন্যান্য মাছ শিকারী, লাইফগার্ড এবং হাইওয়ে পেট্রল পুলিশ তাদের ডুবে যেতে দেখলে তারা উদ্ধার করতে ঝাপিয়ে পড়েন। তারা তাদেরকে সিপিআর দেন। তবে তাদেরকে জীবিত অবস্থায় ফেরানো যায়নি। এসময় ঘটনাস্থলেই মাহাদী মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় মোজাফ্ফরকে উলংগং হাসপাতালে নেয়া হলে তারও মৃত্যু হয়। তাদের সঙ্গে থাকা সিডনির ওয়ালীপার্কের বাসিন্দা ৪২ বছরের আরেক যুবক নিরাপদ ও সুস্থ রয়েছেন। চ্যানেল নাইন নিউজ আরো জানায়, ঘটনাস্থলে দুই পুলিশ অফিসার সহ সাতজনকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এসময় ১০ জন প্যারামেডিক একসঙ্গে কাজ করেন।

প্যারামেডিক নর্ম রিস নাইন নিউজকে বলেন, “ ঘটনাস্থলে যে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। সার্ফ গার্ড, এম্বুলেন্স অফিসার, হেলিকপ্টার প্যারামেডিক সকলেই সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন তাদের বাঁচাতে।”
উল্লেখ্য, মাত্র তিন সপ্তাহ আগে রাতের বেলা একই স্থানে সাগরের ঢেউয়ে আরও তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়।