সিডনিতে সৃজনী দাঁ মুগ্ধতা ছড়ালেন বান ভাসি বাংলা গানে

  
    

প্রশান্তিকা রিপোর্ট: সিডনিতে প্রিয় একটি সঙ্গীত পরিবার দাঁ ফ্যামিলি। স্বামী অভিজিৎ এবং স্ত্রী সৃজনী দাঁ’র সংমিশ্রণে সিডনিবাসী বাঙ্গালীরা আরেকবার পেলো অনুপম সুরের ছোঁয়া। গত ২২ সেপ্টেম্বর রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় সিডনির হার্স্টভিল এন্টারটেইনমেন্ট সেন্টারে হয়ে গেলো দাঁ স্টুডিও নিবেদিত দাঁ যুগলের বাংলা গানের ‘বান ভাসি গান’র মুগ্ধকর পরিবেশনা। কন্ঠশিল্পী সৃজনী এবং বাদন শিল্পী অভিজিৎ দাঁ’র সুরের আলাপ উপস্থিত হলভর্তি দর্শক উপভোগ করেছেন।

‘বান ভাসি গান’ উপস্থাপনায় আসেন সিডনির প্রিয়মুখ আনন্দধারার কর্ণধার শ্রীমন্ত মুখার্জী। শুরুতেই পরিবেশিত হয় সিডনিতে সৃজনীর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শিশু কিশোরদের গানের পরিবেশনা ‘আগুনের পরশমনি’। এতে অংশ নেয় সামারা, সাজমা, মান্হা, সাফিনা, রূপান্তর, মোনালী, শ্রীজিত এবং জয়ন্ত।

শিল্পী সিরাজুস সালেকীনকে সম্বর্ধনা দেয়া হচ্ছে।

আয়োজকেরা এরপর মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান সিডনিবাসী প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সিরাজুস সালেকীনকে। প্রবাসে বাংলা গানের শুদ্ধ চর্চা ও জনপ্রিয়তার ধারা বজায় রাখার অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। শিল্পী সিরাজুস সালেকীনকে উত্তরীয় পড়িয়ে দেন অভিজিৎ দাঁ, এসময় সঙ্গে ছিলেন মুকুল রায় ও টিটো রায়।

গান গাইছেন সৃজনী, তবলায় অভিজিৎ দাঁ

মঞ্চে আসেন শিল্পী সৃজনী দাঁ, তবলা নিয়ে পাশে উপবিস্ট হোন অভিজিৎ দাঁ এবং কীবোর্ডে দেবযানী, গীটারে ভীর ও ডম, পারকিউশনে রাশনান। বাদ্যযন্ত্রে আরও ছিলেন সাকিনা আক্তার ও প্রয়িতী।
শিল্পী সৃজনী একে একে গেয়ে শোনান বারো মাসে তেরো পার্বণ; এ শুধু গানের দিন; উচাটন মন ঘরে রয়না; এক বৈশাখে দেখা হলো দুজনায়; তুমি বও; আমি চলতে চলতে থেমে গেছি; আঁধার আমার ভালো লাগে; মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা; আবার কখন কবে; আমায় তুমি চিনলে নাগো; কাগজের ফুল এবং মাকে যদি এনে দাও। বিরতির আগে সৃজনীর ছাত্রী প্রয়িতী গেয়ে শোনায় ‘তখন তোমার একুশ বছর’ গানটি।

সাবিনা ইয়াসমিনের গান ‘একি সোনার আলোয় জীবন’ গাওয়ার সময়ের মুহূর্ত

বিরতির পরে আবারও ছিলো সৃজনীর ছাত্র ছাত্রীদের পরিবেশনা। রূপন্তী, রাশনান, স্রোতেশ্বনী গেয়ে শোনান ‘আজ মন চেয়েছে হারিয়ে যাবো’এবং ‘মন ভোমরা’ গান দুটি। দর্শকেরা মুহুর্মুহ হাততালি দিয়ে গ্রহণ করে।

বিরতির পরে সৃজনী প্রখ্যাত শিল্পী রাহুল দেব বর্মনকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে একটি সেগমেন্ট করেন। এরপর গেয়ে শোনান জীবন্ত কিংবদন্তী শিল্পী লতা মুঙ্গেশকরের বিখ্যাত গান ‘দূরে আকাশ শামিয়ানা’গানটি। এরপর শোনান জয় সরকারের সুর ও শ্রীজাত’র লেখা ইন্তেজার গানটি। সৃজনীর গুরু শ্রী গৌতম ঘোষালের কথা ও সুরে বেশ কিছু মৌলিক গান গেয়ে শোনান। যেমন তোমারও জানালা; বৃষ্টি পায়ে পায়ে; কত রাতের পরে রাত গেছে চলে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের ‘একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে’ গানের সঙ্গে দর্শকেরাও কন্ঠ মেলান। তিনি প্রয়াত শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহর একটি গান করেন। এরপর মান্না দে’র বিখ্যাত গান ‘ওকে আজ চলে যেতে বলোনা’ গেয়ে শোনান।

সৃজনীর ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনা

অনুষ্ঠান শেষে দর্শকেরা সৃজনীর সুরের মূর্ছনা নিয়ে হল ছাড়েন। প্রশান্তিকার সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই বলেন, চমৎকার আয়োজন ছিলো এটি। তবে অনুষ্ঠানের শুরুতে সাউন্ডে হয়তো একটু সমস্যা ছিলো। তবে খুব শিগগির তারা এটি কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। দর্শকেরা পেঁছনের পর্দায় বিভিন্ন গান অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ভিস্যুয়াল খুব উপভোগ করেছেন। অন্য এক প্রতিক্রিয়ায় এক দম্পতিতো বলেই ফেললেন, সৃজনীই আমাদের সিডনির শ্রেয়া ঘোষাল বা শুভমিতা, ঢাকা বা কলকাতায় থাকলে সেও তাঁদের মতো মিডিয়া কাভারেজ পেতো। সৃজনীর গানের অনুষ্ঠান আরও বেশি হওয়া উচিত বলে অনেকেই মনে করেন। অভিজিৎ দাঁ’র বাজানো নিয়ে একজন মন্তব্য করলেন, তিনি খুবই ভালো বাজান। আমরা এর আগেও ঢাকা ও কলকাতার প্রখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর বাজনা দেখেছি। এককথায় তাঁদের এই যুগলবন্দী পরিবেশনা দর্শকেরা খুবই উপভোগ করেছেন।

ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনা

‘বান ভাসি গান’ আয়োজনে সহযোগিতা করেছেন হার্ট এন্ড সোল, রিপা শাড়ি সম্ভার, মিট্টি, কথক এবং মুকুল দে সলিসিটর এবং আনন্দধারা। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলো প্রশান্তিকা, প্রভাত ফেরী, সিডনি বাংলা ডটকম পত্রিকা। উল্লেখ্য সৃজনী দাঁ এর আগে সিডনিতে অসংখ্য গানের অনুষ্ঠান করেছেন। তারমধ্যে ‘তাল সে তাল’ অনুষ্ঠানটা দর্শক হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। সৃজনী এর আগে কালার টিভি মেগাস্টার অস্ট্রেলিয়া পুরস্কারে ভূষিত হন। বাজারে সৃজনীর ইচ্ছে রং এলবাম সহ অনেকগুলো মৌলিক গানের সিংগেল রয়েছে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments