প্রশান্তিকা রিপোর্ট: সিডনি শহরের প্রধান ও প্রশস্ততম সড়কের নাম জর্জ স্ট্রিট। এই সড়কটির ওপর কাল শনিবার যাত্রীসহ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে নতুন ট্রাম বা লাইট রেল। গত শনিবার চালু হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আরও কিছু বিষয়ের সমাধান করে কাল শুরু হচ্ছে যাত্রী উঠানামার কাজ। কাল সারাদিন এবং রোববার যাত্রীরা বিনে টিকিটে এই ট্রামে ভ্রমণ করতে পারবেন বলে জানা গেছে। এটি প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত চলাচল করবে।
জর্জ স্ট্রিটের উত্তর পার্শ্ব সার্কুলার কি থেকে শুরু করে নতুন লাইট রেলটি পুরো শহরের মধ্য দিয়ে সিডনির দক্ষিণ পূর্ব সাবার্ব র্যান্ডউইক ও কেনসিংটনে গিয়ে শেষ হচ্ছে।
সিডনির স্মরণকালের ব্যয়বহুল এই নির্মাণকাজ ৪ বছর চলার পর অবশেষে শেষ হচ্ছে। ২০১৫ সালের অক্টোবরে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে মাত্র শেষ হয়েছে। প্রথম ধাপে এটি সিটি থেকে র্যান্ডউইক পর্যন্ত লাইনে যাত্রী আনা নেয়া করবে। প্রায় তিন মাস ধরে নতুন লাইট রেল বা ট্রামগুলো এই লাইনে টেস্ট ড্রাইভ করছে। আজ হচ্ছে শেষ মুহূর্তের পরীক্ষণ। প্রতিটি ট্রাম সময় ধরে ট্র্যাকগুলোতে চলছে। এমনকি মানুষের ভর পরিমাপ করার জন্য বালির ব্যাগ ভরে ট্রামগুলো চলছে। এক্ষেত্রে তিন ব্যাগ বালিকে একজন মানুষের ওজন ধরে পরিমাপ করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রামের এক চালক জানিয়েছেন। ট্রামগুলো রিয়েল টাইমের মতো প্রতি ৫/১০ মিনিট পরপর টেস্ট ড্রাইভ করছে। ট্রামের সামনে পেঁছনে গন্তব্য সাইন লেখা থাকলেও দরোজা বরাবর নো এন্ট্রি এবং টেস্ট ড্রাইভ সাইন লাগানো রয়েছে। প্রায় একই লাইনে যাবার পর দ্বিতীয় রুট সিটি থেকে কিংসফোর্ড লাইনটি নতুন বছরের মার্চে চালু হতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
ট্রাম টেস্টিং চলা অবস্থায় গত ১৩ নভেম্বর একটি দূর্ঘটনাও ঘটে। সেদিন মার্কেট ও জর্জ স্ট্রিটের ইন্টারসেকশনে ট্রাম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মার্কেট স্ট্রিট দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেসময়ে এটিকে কেন্দ্র করে পুরো সিটিতে যানজটের সৃষ্টি হয়।
নিউ সাউথ ওয়েলস্’র ট্রান্সপোর্ট বিভাগ এই লাইট রেলের মালিক। তারা মনে করছে ট্রামটি চালু হলে জনগনের দূর্ভোগ কমে আসবে। যাত্রীরা অতি সহজেই এতে উঠানামা করতে পারবেন। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের প্রিমিয়ার গ্লাডিস বেরেজিকলিন গত সপ্তাহে বলেন, নতুন ট্রামে সিডনির মূল শহর থেকে সিডনির দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ অতি সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন এবং সিডনিতে আগত দর্শনার্থীরা অতি সহজে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারবেন।
নতুন লাইনটিতে রেল ১৯টি স্টেশনে থামবে এবং এর নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। শুরুতে এর ব্যয় ১.৬ বিলিয়ন ধরা হলেও দুই দফায় স্প্যানিশ কন্সট্রাকশন কোম্পাণী ব্যয় বাড়িয়ে নেয় এবং নির্মাণ সময়ও প্রায় এক বছর বাড়ায়। এতে করে জনদূর্ভোগ বাড়ে।
সিংগেল ট্র্যাক হিসেবে লাইট রেলের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার। এটি সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার/ঘন্টা বেগে চলতে পারবে। দক্ষিণ পূর্ব সাবার্বের কমিউটাররা অনেকেই মনে করছেন এর লাইন যেহেতু সাবার্বের সব জায়গায় যাবেনা, সেহেতু তারা চলমান সিডনি বাসে করেই সিটিতে যাবেন এবং কাজ শেষে বাসে করেই বাড়ির কাছাকাছি কোন স্টপে নামবেন। তবে টুরিস্ট এবং রেসকোর্সে যাওয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা কাছাকাছি স্টপেজ থাকায় লাইট রেল ব্যবহার করবেন।

সিডনি সিটিতে লাইট রেলের সমান্তরাল গাড়ি বা অন্যান্য যানবাহন চলতে পারে। তবে তাদেরকে নতুন ঘোষিত আইন মেনে চলতে হবে। অন্যথায় অর্থদন্ড ও ডিমেরিট পয়েন্ট কাটা যাবে।
নতুন রোড রুলস হলো
:ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলতে হবে। ট্রামের সামনে কখনোই টার্ন নেয়া যাবেনা।
:রেলওয়ের লাইন বরাবর গাড়ি চালানো এবং পার্ক করা নিষেধ। এটি করলে ২৬৮ ডলার জরিমানা ও ডিমেরিট পয়েন্ট।
:ইন্টারসেকশনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়ালে ৩৬৮ ডলার ও ডিমেরিট পয়েন্ট।
: হেটে যাওয়া পথচারীরাও যত্রতত্র লাইট রেলের ট্র্যাক পাড় হতে পারবেন না। ইন্টারসেকশনে চলন্ত ট্রামের কাছাকাছি থাকলে তাদের ৭৫ ডলার জরিমানা করা হবে।
র্যান্ডউইক ও সিটি লাইনের শেষ ধাপ সিটির সার্কুলার কি এবং র্যান্ডউইকের প্রিন্স অব ওয়েলস হাসপাতালের সামনে হাই স্ট্রিট। এখান থেকেই ট্রাম চলা শুরু হবে।

প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে আমরা কথা বলেছি এই গন্তব্যের শেষ প্রান্তের একটি ক্যাফে ও চিকেন শপ ‘ফ্রেশ অন হাইস’ কর্তৃপক্ষের সাথে। এটির মালিক লি খোই বললেন, “এটি নির্মাণে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করলেও অবশেষে আনন্দ মুহূর্ত এটি। তিনি বলেন, যাত্রীরা এখানেই ট্রামে উঠবেন বা নেমে যাবেন। দুটো সময়েই আমাদের সহ পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে তারা খাবার কিনবেন। সুতরাং আমাদের ব্যবসার জন্য এটি খুব ভালো হবে। আর ইতোমধ্যে আমরা সেটা বুঝতে পারছি। তাছাড়া হাসপাতাল থেকে অনেক রোগী সিডনি সিটি বা অন্যস্থানে সহজেই যাওয়া আসা করতে পারবেন।”
একই লাইনে সিডনি সিটি থেকে কেনসিংটনের সাউথ সিডনি জুনিয়র ক্লাব পর্যন্ত লাইট রেলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে নতুন বছরের মার্চ মাসে।
উল্লেখ্য লাইট রেলে যাত্রীরা ট্রেন বা বাসের মতো টিকেট হিসেবে ওপাল কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।