সিদ্দিক বকরের তিনটি কবিতা

  
    
সিদ্দিক বকর

ও আষাঢ় ও পাতা

আষাঢ়ে বহে ধারা, মেঘজাল আকাশে
ক্ষিতি ভিজে বির্যের জলে ঘোমটা ফেলে
সাগর তাপে অগ্নিবেগ ওঠে বাতাসে
শূন্য ভরা জল বৃষ্টিফল পাতা দোলে।

আষাঢ়ে আষাঢ়ে বয়স বাড়ে নিশ্চুপ
তবু মধ্য যৌবন বেঁচে থাকে পাতায়
পাতায়- এ কোন রঙ ধরো অপরূপ
ধরিত্রী? অপলক দেখি হায় তোমায়।

ও পাতা, তুমি নও কি কাক খেরো খাতা
মোর জীবনের? ও এ কালের করোনা
আষাঢ়, যতো আছে রে বৃক্ষ আর পাতা
ফুলে ফলে থাকুক ঝড়ে ঝরে ঝরোনা।

পাতাটি মোর ফুসফুস বৃষ্টিতে ফোটা
ঝরনাধারা ঝরে প্রাণরসের ফোঁটা।

ক্রিং-ক্রিং-ক্রিং

দু’হাত বাড়িয়ে নয় শুধু – হৃদয় খুলিয়া দিয়াছি
অনন্ত যৌবনে আমার – যা কিছু ছিল জীবনে সঞ্চয়
অশেষ ঢেওয়ে ঢেওয়ে বিলিয়েছি – শূন্য করেছি হৃদয়
তবু হায়! আনন্দ বেদনায় – মৃদঙ্গী দেহ পূর্ণ করেছি ।

ভালোবাসা পাওয়া সহজ নয় – বুঝেছি জীবন মন্থনে
কি হবে আপসরফা করে – এ ক্ষুদ্র জীবনের সাথে ?
মানুষ হারায়নি দিশা আজ – অদৃশ্য করোনার হাতে?
ভালোবাসায় পূর্ণ করো এ জীবন – পূর্ণ করো ক্রন্দনে।

ঐ যে বেলহীন সাইকেলের – হাতল ধরে হাঁটা
দিনগুলির কথা – মনে পড়ে কি হায়! কখনো আজ ?
স্মৃতির ঘূর্ণনশক্তি -মান্দাইলের ডোল ভাঙে চতুর বাজ
ছটফট করি সাইকেল ধরি – গায় মেখে হলুদ বাটা।

সেই সাইকেলের খোঁজে বেহুঁশ দৌড়ি – বালকের ল্যাংটা রিং
ফিরে দেখি, আমিই সেই বেলহীন চেইনহীন সাইকেল- ক্রিং ক্রিং ক্রিং।

ও নদী ও পাখি

বলি শোন ও নদী, ও পাখি- একাকী শরীরের ঘামে
ভেজা রুমালের মতো রাতের বিহ্বল জ্যোৎস্না দেখি
জলগৃহে মরে থাকে আগুনাত্মা,নাড়িছেঁড়া এতিম ঘুমে
তালশাঁসেরা বিলাপ করে অঝোরে, শ্মশানে পোড়ে পাখি।

পোড়ে জল, পোড়ে বৃক্ষ, আমি কেবল আত্মার ভিতরে
মরা অঙ্কুর নিয়ে নদীর মাঝে আলো ঝলমল অমল
আবাস গড়ি; বুকের রক্ত ঢেলেও ডাহুক তার বাহিরে
ডিম ফোটাতে পারেনা; আমি এবং জল আমরা কেবল।

নিজের ভেতর শ্রমকাতর- শ্বাসপ্রশ্বাসের রক্তধারায়
জলের গর্ভমূলে বিদ্যুৎভ্রূণ আমলে গর্ভপাতের অনুষ্ঠান
বানাই, ফারাক্কা এবং টিপাইমুখের আলো ঝলমল পাড়ায়
কেবলি গর্ভপাত কেবলি অনুষ্ঠান কেবলি ধূলিস্নান

পৃথিবীর তিনভাগ জল শুকিয়ে একভাগ স্থলে
পবিত্র আয়াতের ফুঁ নিয়ে বুকে একশভাগ পূর্ণতায় জ্বলে।

অলংকরণ: আসমা সুলতানা মিতা। 

সিদ্দিক বকর
জন্ম- গাজিরচর,বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।
বাস রায়েরবাগ, ঢাকায়।
পেশায় ব্যবসায়ী হলেও সংস্কৃতি ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী।
লেখালেখি মাধ্যম- গল্প ও কবিতা
প্রকাশিত গ্রন্থ: জীবন্মুক্ত বাতিঘর (গল্প)।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments