সেল্ফ আইসোলেশন বা নিজস্ব দূরত্ব বজায় রাখবেন যেভাবে -ডা: নাহিদ সায়মা

  
    
ডা: নাহিদ সায়মা

বর্তমান COVID-19 বা করোনা ভাইরাস সিচুয়েশনে বার বার সেল্ফ আইসোলেশন ফর টু উইকস বা দুই সপ্তাহ কথাটা চলে আসছে। সে প্রসঙ্গেই আমার এই লেখাটি।

আমার পরিবারে পাঁচজনের মধ্যে চারজনই আমরা হেলথ ওয়ার্কের সাথে সরাসরি জড়িত । আমাদের সবার করোনা ভাইরাসে অ্যাফেক্টেড হওয়ার রিস্কটা অনেকের চেয়েই হয়তোবা একটু বেশী। সময়োপযোগী প্রিপারেশনের অংশ হিসাবে কিছুটা রিসার্চ করে মোটামুটি একটা আউটলাইন তৈরি করে আগামি ছয় মাসের জন্য রেডি হওয়ার এখনি সময়।

অনেকসময় রোগের উপসর্গ শুরু হলে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার, কনফিউজড হয়ে পড়ার একটা সম্ভাবনা থাকে।
পূর্ব নির্ধারিত আউটলাইন এবং প্রিপারেশন থাকলে ভাইরাস এফেক্টেড হলেও সারভাইভ করাটা হয়তো একটু সহজ হয়।

আউট লাইন গুলো নিম্নোক্ত হতে পারে…

১) রুম: টয়লেট সহ একটি রুম সম্ভাব্য ভাবে সিলেক্ট করে রাখা, পর্যাপ্ত পরিমানে পরিষ্কার বেডসীট, তোয়ালে, সাবান, বিনব্যাগ সহ রুমটি সেলফ সাফিশিয়েন্ট ভাবে প্যাক করা যাতে দুই সপ্তাহ বাইরের কোন সাপ্লাই ছাড়াও বসবাস করা যায়।

২) খাবার: কিছু বাড়তি নন পেরিশেবল খাবার ষ্টোর করা। যদিও বার বার মওজুদ করার কথা নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু শেল্ফ লাইফ দেখে কিছু খাবার অন্তত দুই সপ্তাহ চলার মতো রেডি রাখা অবশ্যই উচিৎ।
Nutritionist Brittany Darling বলেছেন খাবার স্টক করার সময় দুইটা পয়েন্ট অবশ্যই খেয়াল রাখতে।

প্রথমত – শেল্ফ লাইফ –
দ্বিতীয়ত- নিউট্রিশন ভ্যালু ।

আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে বৃদ্ধি করে এবং ভাইরাস ইনফেকশনে টিস্যু ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে প্রধানত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমন সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল। আমরা ফ্রোজেন স্পিনাচ, ব্রকলি, বিন্স ইত্যাদির সাথে সাথে ফ্রোজেন বেরি, ম্যাঙ্গো স্টোর করে রাখতে পারি।
ফারমেনটেড ডেইরি প্রোডাক্ট বছরের পর বছর ধরে ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রবাওটিক থাকার কারনে এবং শেল্ফ লাইফ বেশী হওয়ায় ফ্রেশ ডেইরীর তুলনায় এটা স্টোর করা সুবিধাজনক।

প্রোটিন যুক্ত খাবার শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে স্ট্রং করে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ানোর মাধ্যমে ভাইরাসের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। লং লাস্ট করবে এমন প্রোটিন হিসাবে আমরা বিভিন্ন রকমের ডাল, নাটস, সিডস,কিনোয়া ,চিকপি স্টোর করতে পারি।

প্রোটিনের সাথে সাথে এ সমস্ত খাবারে জিংক এবং সিলিনিয়াম থাকে। সিলিনিয়াম ভাইরাসকে রেপ্লিকেট করা থেকে বিরত করে অর্থাৎ ইনফেকশন বাড়তে দেয় না এবং যথাযথ জিংক লেভেল আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে রেসপন্স করতে সহায়তা করে।

Nutritionist Rick Hay বলেছেন প্ল্যান্টবেজড প্রোটিন পাউডার, রাইস মিল্ক, এলমণড মিল্ক , কোকোনাট মিল্ক জাতীয় কিছু খাবার স্টোর করতে, বিশেষ করে ব্রেকফাস্টের জন্য।

কিছু সুপারফুড পাউডার যেমন açai , spirilina সকালের স্মুদিতে দেওয়ার জন্য স্টোর করতে পারেন।

৩) আইসোলেশনের জায়গা পরিবর্তন না করা-
অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য যতটা সম্ভব নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য যা প্রয়োজন যেমন কিছু বই, নেটফ্লিক্স ইত্যাদি ।
আমি কিছু বাংলা বই এবং একটা বাংলা অর্থসহ কোরআন রেডি রেখেছি আমার জন্য। ছেলেদের বলেছি লাইব্রেরি থেকে ওদের কিছু প্রিয় বই কালেক্ট করতে।

৪)স্যানিটাইজেশন: হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান।

৫) সিম্পটন পর্যবেক্ষণ: সিম্পটম বাড়লে হসপিটালে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কন্টাক্ট নাম্বার রেডি রাখা, কিছু মাস্ক, গ্লাভস রেডি রাখা ।

৬) মানসিক স্বাস্থ্য: অবশ্যম্ভাবী ভাবেই সেলফ আইসলেশন এবং ভাইরাস ইনফেকশন প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে –
যতোটা সম্ভব ফ্যামিলি এবং বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ রাখা, একটা নির্দিষ্ট ডেইলি রুটিন করা এবং ঘরের ভেতরেই কিছু হাল্কা এক্সারসাইজ করা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে।

পজিটিভ চিন্তা, স্পিরিচুয়াল চিন্তা, শান্তিপূর্ণ চিন্তা এবং নিজের চেষ্টার পাশাপাশি কিছুটা মহানশক্তিমান একজনের উপরে ছেড়ে দেওয়া -এটুকুই আমাদের এই COVID-19 এর কঠিন সময়টুকু পার করার পাথেয় হিসাবে আপাতত চেষ্টা করে যাওয়া ।

COVID-19 বা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানেই কিন্তু মৃত্যু নয়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৩ লাখেরও বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে। সঠিক চিকিৎসা ও পদক্ষেপের কারনে ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। প্রয়োজনীয় সঠিক প্রিপারেশন সহ ভাইরাসকে মোকাবেলা করা এবং সুস্থতা অর্জন – এটাই হোক আমাদের চেষ্টা।

(Source : Australian Men’s health)

Dr.Nahid Sayma
Dental Surgeon and Public health specialist.
Sydney , Australia.

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments