স্কুলে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা

  
    

প্রশান্তিকা প্রতিনিধি, ঢাকা: দীর্ঘ দেড় বছর পরে স্কুলে ফিরেছে ছাত্র ছাত্রীরা। মাস্কের আড়ালে উচ্ছ্বসিত লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রীতে মুখরিত বাংলাদেশের আজকের স্কুল কলেজগুলো। এ উপলক্ষে সারাদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক ও কর্মচারিরা ছাত্রদের বরণ করে নেয়। অভিভাবকদের মধ্যেও আনন্দ তবে কোনো কোনো অভিভাবকের মধ্যে ভর করেছে আতঙ্কও। ভয়াল করোনায় যেনো তাদের সন্তানেরা আক্রান্ত না হন- সেই দুশ্তিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে চান অনেকে। সরেজমিনে বের হয়ে দেখা যায়, স্কুল কলেজের গেটেই হয় তাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ছাত্ররা ক্লাসে বসে গেছে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন বা সামাজিক দূরত্বে কোন ছাড় নয়। অর্থ্যাৎ সকল নিয়মাবলী মেনেই ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাসে ফিরেছে। তিনি আরও বলেছেন, সংক্রমণ বাড়লে স্কুলও বন্ধ করে দেয়া হবে।
সিরাজগঞ্জের নাটুয়ারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনারুল ইসলাম বলেন, “ দীর্ঘদিন পরে শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে ভরে উঠেছে স্কুল। আমরা শিক্ষক হিসেবে এই দৃশ্য দেখে আনন্দিত। আমরা যেনো কারামুক্ত হলাম। ছাত্ররা স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে এসেছে। তারা হাত ধুয়ে ক্লাসে ঢুকছে এবং ঢোকার সময় তাদের গায়ের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে। তারা ক্লাসেও বসেছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।” তিনি আরও বলেন, সরেজমিনে স্কুল পরিদর্শন করেন স্থানীয় চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মান্নান চাঁন। তিনি স্কুলের সার্বিক অবস্থা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে প্রবেশ করছে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুরের নাটুয়ার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সরেজমিন পরিদর্শন করছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান চাঁন। ছবি: মনারুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে এসেছে শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী; যারা নতুন ভর্তি হয়েছে, তাদের জন্য আজই স্কুল-কলেজের প্রথম দিন। এ জন্য অনেক স্কুলের ফটক সাজানো হয়েছে। কোনো কোনো স্কুল ড্রাম বাজিয়ে, করতালি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়েছে বলে জানা গেছে। শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল। সে আলোকেই প্রস্তুত স্কুলগুলো।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। ঐ বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর সংক্রমণ পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সবশেষ করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে আগামী মধ্য অক্টোবরে।

তবে আজ স্কুল-কলেজ খুললেও সব শিক্ষার্থী একসঙ্গে যাবে না। শুধু ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন (সপ্তাহে ছয় দিন) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। এদের সঙ্গে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির মধ্যে যে কোনো একটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে এক দিন করে যাবে। দুটি করে ক্লাস ধরে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে রুটিন তৈরি করেছে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments