জন মার্টিন
এখন শপিং সেন্টারে গেলেই – চোখে পড়বে ক্রিস্টমাসের ঝকমকে রঙিন সাজগোজ। সবচেয়ে বেশী চোখ পড়বে ঐ স্যান্টা ক্লস এর উপর। ছোট বাচ্চারা তো রীতিমত লাইন ধরে ছবি তুলবে । স্যান্টা ক্লস ওদের প্রিয় চরিত্র। এই স্যান্টা ক্লস ওদের মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা ইচ্ছেগুলো পূরণ করবে। কতকিছু চাইতে ইচ্ছে করে, পেতে ইচ্ছে করে – কিন্তু সব তো আর পাওয়া যায় না। কিন্তু বছরের শেষে স্যান্টা ক্লস জাদুর বলে সব জেনে যায়। তারপর ক্রিস্টমাস এর সকালে দরজা, জানালা বন্ধ থাকলেও কিভাবে যেন বাড়ির ভিতরে ঢুকে – বালিশের নীচে সেই লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে ঘুড়িগুলো রেখে যায়। কিন্তু স্যান্টা ক্লস এর একটি শর্ত হচ্ছে – সারা বছর ভাল হয়ে থাকতে হবে। দুষ্টু হলে আর সেই উপহারগুলো পাওয়া যাবে না।
ছোট ছোট বাচ্চাগুলো স্যান্টা ক্লসকে চিঠি লিখে। সেই সাথে মনের ইচ্ছেগুলো খামে ভরে পোস্ট অফিসে ফেলে দিয়ে আসে। ঠিকানা লিখে, ‘স্যান্টা ক্লস, নর্থ পোল’। ব্যাস, চিঠিগুলো পৌঁছে যায় জায়গা মত। এই বাচ্চাগুলো যখন চিঠি লিখে তখন ওরা সত্যিই বিশ্বাস করে যে স্যান্টা ক্লস নামে কেউ একজন আছে যে ওদের মনের মত খেলনাগুলো বালিশের নীচে পৌঁছে দিবে। সেই খেলনা দেখে বাচ্চাগুলোর মন খুশীতে ভরে যাবে। সেই আনন্দ দেখে বাচ্চাগুলোর বাবা- মায়ের মন ভরে উঠবে। আহা কি চমৎকার একটি খেলা। বাবা-মায়েরা জানে স্যান্টা ক্লস নেই। তারপরও এই খেলাটি খেলে। বাবা-মায়েরাই স্যান্টা ক্লস সেজে বাচ্চাগুলোর মনে হাসি ফুটায়। বাচ্চাগুলোর মন জুড়ে বসে থাকে সেই স্বপ্নের মানুষটি।

বাচ্চাগুলো একসময় বড় হয়। যুক্তি দিয়ে একদিন আবিষ্কার করে স্যান্টা ক্লস নামের কেউ নেই। একটি গল্প। সেন্ট নিকলাস নামের একজন পুরোহিতের গল্প। সেই পুরোহিত বেঁচে নেই কিন্তু বাচ্চাদের মুখে হাসি উপহার দেবার যে কাজটি শুরু করেছিলেন তা কিন্তু এখনো বেঁচে আছে। অনেকে বলে যে এমন একটি মিথ্যে গল্প কি বাচ্চাদের শিখানো দরকার? আমি বলি স্যান্টা ক্লস মারা যান নি। স্যান্টা ক্লসের এই গল্প কিন্তু মিথ্যে নয়। স্যান্টা ক্লস এখনো বেঁচে আছে। সে এখনো প্রতি বছর সবার ঘরে যায়। কারণ ঘরে ঘরে স্যান্টা ক্লস তৈরি হয়েছে। ঐ যে মা আর বাবারা পালা করে স্যান্টা ক্লস বনে যায়। আমি ভাবি অন্য কথা। এই বাচ্চাগুলো যখন আবিষ্কার করে যে স্যান্টা ক্লস আর চিমনী দিয়ে ঘরে ঢুকে না – তখনি তাদের মনে একটি মূল্যবোধের বীজ বুনে দেয়ার সঠিক সময়। ঠিক তখনি ওদের বলা যায় যেভাবে স্যান্টা ক্লস ওদের মুখে হাসি উপহার দিয়েছে, একই ভাবে সে অন্যের মুখে হাসি উপহার দিতে পারে। কারণ অন্যের জন্য আমরা যখন কিছু করতে পারি তখন আমাদের মনটা ভাল হয়ে যায়। কথাটি আমার নয় । এটা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে একটি গবেষণার কথা বলি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই দল ছাত্রছাত্রীদের কিছু টাকা দেয়া হোল যেন তারা সেই টাকা নিজের জন্য খরচ করে । নিজের জন্য খরচ করার পর তাদের কেমন লেগেছিল – তা মাপা হোল। এবার দ্বিতীয় ধাপে, প্রথম দলকে আবার কিছু টাকা দেয়া হোল এবং বলা হোল তারা যেন আবারো নিজের জন্য খরচ করে। আর অন্যদলকে একই পরিমাণ টাকা দেয়া হোল এবং বলা হোল তারা যেন টাকাগুলো নিজের জন্য খরচ না করে অন্যের জন্য খরচ করে। এবার দুই দলেরই কেমন লেগেছিল তা মাপা হোল। পরীক্ষা করে কি পাওয়া গেল? যারা অন্যের জন্য টাকা খরচ করেছে তারা অন্য সবার চেয়ে বেশী সুখী ছিল।
এমন সুন্দর একটি মানবিক মূল্যবোধ যদি আমাদের বাচ্চাদের মনে বুনে দিতে পারি, আমি নিশ্চিত আমাদের বসবাস আরও আনন্দময় হবে। আমাদের বাচ্চাগুলো আরো মানবিক হয়ে উঠবে।
মানুষ মূলত ভাল। মানুষের মানবিক গুণগুলোর শক্তি যে কি অসীম তা অনেকেই টের পায় না।
জন মার্টিন
অভিনেতা, নাট্যকার,
নির্দেশক, মনোবিজ্ঞানী
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।