হুমায়ুন আজাদের লেখায় শিশুমন বৈভব । ইমরুল ইউসুফ

  
    

[ ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক, এবং অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের শিশুতোষ গ্রন্থ ও শিশুমন নিয়ে লিখেছেন ইমরুল ইউসুফ।]

ভালো একটি বই পড়া হলে গল্পরা প্রজাপতির মতো পাখা মেলে আকাশে মেঘ হয়ে উড়ে বেড়ায়। শুধু একটি বই কেনো- ভালো একটি লেখা, ভালো একটি সিনেমা, একটি ভালো ছবি মানুষের নতুন মনোজগত তৈরি করে। যেখানে নতুন নতুন ভাবনা, নতুন স্বপ্ন, নতুন রূপরেখা তৈরি হয়। যে রেখায় থাকে গাড় রং। রংধনুর মতো। গাছের সবুজ ডগায় ফুটে থাকা ফুলের মতো। অ্যাকুইরিয়ামের স্বচ্ছ জলে ভেসে বেড়ানো মাছের মতো।
রং মানেই তো আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উৎসব, স্বপ্ন। তাই স্বপ্ন মানে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে- ‘দূরে বহুদূরে/ স্বপ্নলোকে উজ্জয়িনীপুরে/খুঁজিতে গেছিনু কবে শিপ্রানদীপারে/ মোর পূর্বজনমের প্রিয়ারে।’ কিংবা শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার মতো ‘পাল্লাদাস ক্ষণে ক্ষণে আমায় সেই স্বপ্নচ্ছাময় ঘুম থেকে জাগিয়ে বলেছিল/ এই তো গ্রীসদেশ, এখানে কেউ ঘুমায় না/ কাল রাতে জাগিয়ে রেখেছিল আমার পুরানো চাঁদ।’ সত্যিই তাই। যা আমাদের ঘুমাতে দেয় না, তাইতো স্বপ্ন।

অনেক লেখক আছেন যাঁদের লেখা পড়তে গিয়ে মনে স্বাপ্নিক এক কল্পরেখা খেলা করে। নতুন করে ভাবতে শেখায়। নতুন স্বপ্ন দেখায়। যাঁর লেখা পড়তে পড়তে শিশুরা ভেসে বেড়ায় কল্পলোকের মেঘমালায়। শিশুমন মুহূর্তেই আকাশ হয়ে যায়। প্রজাপতি হয়ে যায়। হয়ে যায় পাখি। কিংবা রাজহাঁসের ছানার মতো উচ্ছল। বিড়ালের বাচ্চার মতো নরম নরম আদুরে। তিনি হুমায়ুন আজাদ। যিনি প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে খ্যাত। কিন্তু তাঁর মধ্যে ছিল অসম্ভব সুন্দর, সাজানো-গোছানো, স্বপ্নভুক একটি মন। যে মন শিশুর মতো সরল। শিশুদের ভাবনার মতো সহজ, উদার এবং অলিখিত কাগজের মতো সাদা ধবধবে। তা-না হলে তিনি কী-করে লিখলেন- ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, আব্বুকে মনে পড়ে, আমাদের শহরে একদল দেবদূত, বুকপকেটে জোনাকিপোকা’র মতো অসম্ভব সুন্দর, মায়াময়, ছায়াময়, কাব্যময়, স্বপ্নময় লেখা!

হুমায়ুন আজাদের শিশুতোষ লেখাগুলো পড়লে মনে হয় একজন মানুষ এতো অসাধারণ করে কীভাবে লিখতে পারেন! মনে হয় বই পড়তে পড়তে যদি মরতে হয়, তাহলে জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত এই বইটিই পড়তে চাই। কারণ শিশুদের জন্য তাঁর লেখাগুলোয় আছে শৈশব, ভালোলাগা, ভালোবাসা, মায়াভরা গ্রাম। লেখাগুলো যেনো এক একটি দীর্ঘ কবিতা। ঘোলা জলে ছিন্নভিন্ন কচুরিপানার দীর্ঘ বিষন্ন কবিতা। বইয়ের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য যেন হৃদয় নিঙড়ানো। পড়ার সময় মনের পর্দায় জাদুবাস্তবতার ছায়া উঁকি দেয়। মনে হয় জাদুময়তা আর বাস্তবতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল। মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে তাঁর নানাবাড়ি কামাড়গাঁওয়ে। বাবা আবদুর রাশেদ প্রথম জীবনে শিক্ষকতা এরপর পোস্টমাস্টারি এবং পরে ব্যবসায়ী হন। মা জোবেদা খাতুন গৃহিনী। হুমায়ুন আজাদ যে গ্রামে বাস করতেন সেটি আগে থেকেই বিখ্যাত ছিল। কারণ এখানে জন্মেছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। গ্রামের নাম রাঢ়িখাল। তাঁর জন্ম কামারগাঁও। কিন্তু রাঢ়িখালকে মনে করতেন তাঁর জন্মগ্রাম। গ্রামটি পানির গ্রাম নামেও পরিচিত ছিল। কারণ ওই গ্রামে ছিল অনেক পুকুর। যা বর্ষাকালে পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠত। তখন গ্রামটিকে পানির ওপর ভাসতে থাকা কচুরিপানার মতো মনে হতো। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর কবিতাচর্চা শুরু হয়। তাঁর প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল দৈনিক ইত্তেফাক-এর শিশুপাতা কচিকাঁচার আসরে।

ছোটোবেলায় হুমায়ুন আজাদ যে ঘরে পড়তেন তার সামনে ছিল বিরাট একটা কদম ফুল গাছ। প্রতি বর্ষায় ফুলে ফুলে ভরে উঠত গাছটি। স্কুলে পড়ার সময় এই কদম গাছ নিয়েই তিনি একটি উপন্যাস লেখা শুরু করেন। এ লেখায় কোনো কাহিনি ছিল না। চরিত্র ছিল না। শুধু ছিল রূপের বর্ননা। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। এজন্য তাঁর প্রতিটি লেখার মধ্যে প্রকৃতিপ্রেমের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। তিনি তাঁর ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না বইয়ে লিখেছেন ‘আমি এক সময় ছিলাম- ছোট। ছিলাম গ্রামে, গাঁয়ে, যেখানে মেঘ নামে সবুজ হয়ে নীল হয়ে লম্বা হয়ে বাঁকা হয়ে। শাপলা ফোটে; আর রাতে চাঁদ ওঠে শাদা বেলুনের মতো। ওড়ে খেজুর ডালের অনেক ওপরে। যেখানে এপাশে পুকুর ওপাশে ঘরবাড়ি। একটু দূরে মাঠে ধান সবুজ ঘাস কুমড়োর হলদে ফুল। একটা খাল পুকুর থেকে বের হ’য়ে পুঁটিমাছের লাফ আর খলশের ঝাঁক নিয়ে চ’লে গেছে বিলের দিকে। তার ওপর একটা কাঠের সাঁকো, নড়োবড়ো। নিচে সাঁকোর টলোমলো ছায়া। তার নাম গ্রাম।’

হুমায়ুন আজাদ প্রকৃতির স্বাদ উপভোগ করতে পারতেন। আর উপভোগের এ বিষয়টি উপস্থাপন করতেন তাঁর লেখায়। আমাদের শহরে একদল দেবদূত বইয়ের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন- ‘আমি বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাই, মেঘের ডাক শুনতে পাই। উত্তরের আকাশকে অন্ধকার হয়ে যেতে দেখি। আমি দেখতে পাই রুপোর পাপড়ির মতো বৃষ্টি নামছে, টিনের চালে বেজে চলছে নূপুর, খেজুর গাছ নর্তকীর বাহুর মতো তার ডাল এদিক নাড়ছে ওদিক নাড়ছে।
আমি দেখতে পাই সূর্য মোমবাতির মতো কোমল হয়ে গেছে, আকাশের এপার থেকে ওপার ভ’রে কালো কাঁথার মতো মেঘ বিছিয়ে আছে। এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে। আমার শরীর জুড়িয়ে আসে, মন জুড়িয়ে আসে।’ প্রকৃতির রূপ বর্ণনায় এমন মানবিক এবং কাব্যিক অনুভূতি তিনি শুধু তাই বইয়ে নয়, সাক্ষাতকারেও বলেছেন। তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন ‘শীতের শিশির, কুয়াশা, ঠান্ডা বাতাস, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদ, বর্ষার প্লাবন, ঝড় মেঘ, শরতের সোনা আর কার্তিকের কুয়াশা, ফাল্গুনের সবুজ পাতা আমার ভিতরে ঢুকে গেছে। আমার যেমন ভালো লাগতো বোশেখের রোদ। তেমনি ভালো লাগতো মাঘের ঠান্ডা।’

হুমায়ুন আজাদ শুধু গ্রাম নয়, শহর এবং শহুরে জীবন নিয়েও ভেবেছেন। শহরের কষ্ট, শহরের স্বপ্ন, শহরের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, ভাব ভালোবাসা, প্রশ্ন, শঙ্কা প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। তিনি ওই একই বইয়ে লিখেছেন- ‘আমাদের শহরকে আমরা আর কেউ ভালোবাসি না। খুব কষ্ট পাচ্ছি কথাটি বলতে; এতো নিষ্ঠুর কথা আমি কখনো বলিনি। আমি জানি আমাদের শহর আমার কথা শুনতে পেলে খুব কষ্ট পাবে। আমার মতোই আর ঘুমোতে পারবে না। মনে মনে কাঁদবে। সত্যিই আমরা কেউ আর আমাদের শহরকে ভালোবাসি না। ভালোবাসি না বলে আমরা কেউ আর ঘুমোতেও পারি না।
আমাদের শহর কি ভালোবাসে আমাদের? মনে হয় ভালোবাসে না। আমি আমাদের শহরের চোখের নিচে চোখের কোণে খুব কালো কালি দেখতে পাই। মনে হয় আমাদের শহরও আমাদের মতোই ঘুমোত পারে না। ঘুমোতে পারলে কারো চোখে এতো কালি জমে না। ভালোবাসলে কেউ এতো ঘুমহীন থাকে না।
অথচ আমাদের শহরকে ভালোবেসে বেসে আমরা বড়ো হয়েছি। ভালোবেসে বেসে কথা বলতে শিখেছি, গান গাইতে শিখেছি। ভালোবেসে ফুল চিনেছি, মাটি চিনেছি, ঘাস চিনেছি, মেঘ চিনেছি।’

কবি, ঔপন্যাসিক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ তাঁর লেখক ভাবনার অনেকাংশে জুড়ে ছিল শিশু। শিশুদের মনোজগত নিয়ে তিনি ভেবেছেন, লিখেছেন। তাঁর কঠিন হৃদয়ের একপাশ রেখেছিলেন কোমলমতি শিশুদের জন্য। এজন্য তিনি গল্প, কবিতা, ছড়া, উপন্যাসে শিশুদের মনের কথা, ভাবনার কথা, স্বপ্নের কথা খুব সহজ করে লিখেছেন। বুকপকেটে জোনাকিপোকা বইয়ে লিখেছেন-

কখনো আমি স্বপ্ন দেখি যদি
স্বপ্ন দেখবো একটি বিশাল নদী।
নদীর ওপর আকাশ ঘন নীল
নীলের ভিতর উড়ছে গাঙচিল।
আকাশ ছুঁয়ে উঠছে কেবল ঢেউ
আমি ছাড়া চারদিকে নেই কেউ।
কখনো আমি কাউকে যদি ডাকি
ডাকবো একটি কোমল সুদূর পাখি।
পাখির ডানায় আঁকা বনের ছবি
চোখের তারায় জ¦লে ভোরের রবি।
আকাশ কাঁপে পাখির গলার সুরে
বৃষ্টি নামে সব পৃথিবী জুড়ে।

ওই বইয়ের আরেকটি কিশোর কবিতায় তিনি লিখেছেন-

আমার শৈশব বাজে বাঁশবনে, নদীর কিনারে,
ঢেউয়ের বেহালায়, কাশফুল, মেঘের মিনারে,
পুকুরের শাদা আয়নায়, দুধশাদা পদ্মের ডাঁটায়,
আকাশের নীর নদে তারাদের জোয়ারভাটায়,


হঠাৎ দেখি উড়ছে তারা রোদের মধ্যে ধুলোর মতো,
চাঁদের থেকে নামছে পরী নূপুর বাজে শতোশতো,
মেঘের মতো আসছে কাশের শাদা ফুলের মালা,
মাঝ নদীতে লাফিয়ে ওঠে একটি বিরাট রঙের থালা,
আকাশ ফুঁড়ে বাড়তে থাকে বলের মতো তালের মাথা,
জোৎস্নাবুড়ি বিছিয়ে দিলো আকাশজুড়ে নকশী কাঁথা।’

অন্ধকারে গন্ধরাজ বইয়ে অবুঝ এক শিশুর কথা ভেবে লিখলেন-

তোমার জন্য কুড়িয়ে এনেছি কাঁঠাল পাতা
পকেট ভ’রে এনেছি কুড়িয়ে ঘুঘুর ডাক,
হাতের মুঠোয় সাজিয়ে এনেছি কাশের ফুল
দু- চোখ ভ’রে এসেছি নিয়ে পাখির ঝাঁক।
তোমার জন্য কুড়িয়ে এনেছি ভাটিয়ালি
বুকের মধ্যে এনেছি ভ’রে বাঁশির সুর,
মাথায় ক’রে এসেছি নিয়ে রাতের চাঁদ
তোমার জন্যে এসেছি আমি অনেক দূর।

এমন অনেক মজার মজার ছড়া হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন। শুধু ছড়া নয়, ছড়ার বিষয়-আশয়, জাদু-মন্ত্র, তাল-লয় প্রভৃতি বিষয় নিয়েও শিশুদের জন্য লিখেছেন তিনি। লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ছড়া বড়ো মজার। সারাটা বাল্যকালই তো আমাদের কাটে ছড়ার যাদুমন্ত্র উচ্চারণ ক’রে ক’রে। কে এমন আছে যে বাল্যকালে মাথা দুলিয়ে ছড়া কাটে নি? ছড়ায় যাদু আছে। যে-সব কথা থাকে ছড়ার মধ্যে তার অনেক সময় কোনো অর্থই হয় না, বা অর্থ খুঁজে পাই না; তার এক পংক্তির অর্থ বুঝি তো পরের পংক্তির মানে বুঝি না। ছড়া আসলে অর্থের জন্যে নয়, তা ছন্দের জন্যে, সুরের জন্যে। অনেক আবোলতাবোল কথা থাকে তার মধ্যে, এ-আবোলতাবোল কথাই মধুর হয়ে ওঠে ছন্দের নাচের জন্যে। একটি ছড়া শোনা যাক-

আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে
ঝাঁঝর কাসর মৃদঙ্গ বাজে…

দুটি পংক্তি আমরা গুণগুণ করলাম। এর অর্থ বোঝার কোনো দরকার নেই। তুমি কেবল এ ছন্দে মাতাল হও, এর ভেতর যে কোনো অর্থ থাকতে পারে তার কথা একেবারে ভুলে যাও, কেবল এর ছন্দের যাদুতে নাচো, নাচো।’
হুমায়ুন আজাদ আমৃত্যু (২০০৪ সালের ১২ আগস্ট) লিখেছেন। বিস্তর লিখেছেন বলা যেতে পারে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬৬ (আংশিক অসম্পূর্ণ হতে পারে)। এর মধ্যে কিশোর সাহিত্যের বই ৮টি। এগুলো হলো- ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, আব্বুকে মনে পড়ে, আমাদের শহরে একদল দেবদূত, বুকপকেটে জোনাকি পোকা, অন্ধকারে গন্ধরাজ, লালনীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী, কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী সহ অসংখ্য গ্রন্থ।

বইগুলো পাঠে তিনি শিশুকিশোরদের শুধু ভাবালুতায় আক্রান্ত করেন না, তিনি তাদের নিয়ে যান এমন একটি জগতে যেখানে স্বপ্ন আর সম্ভাবনার আশ্চর্য এক সেতুবন্ধন ঘটে। যেখানে তিনি কিশোরদের মনে প্রশ্ন জাগিয়ে তোলেন। হুমায়ুন আজাদ শিশুকিশোরদের জন্য ইংরেজিতেও অল্পবিস্তর লিখেছেন। একটি বইয়ে তিনি রাজকীয় বাংলার বাঘ অর্থাৎ রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে লিখতে ছাড়েননি।
হুমায়ুন আজাদ তাঁর অনেক লেখায় বিভিন্ন প্রাণির কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে ‘বন্য আগুনের মতো সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং জ্বলন্ত’ এমন উপমা ব্যবহার করেছেন তা শুধু শিশুমন কেন বড়োদেরও মুগ্ধতার সাগরে ভাসিয়ে দেয়।

হুমায়ুন আজাদের শিশুতোষ বইয়ের প্রতিটি পাতাই যেনো আমারই ফেলে আসা শৈশব। শৈশবের আনন্দ বেদনার মহাকাব্য। লেখাগুলো পড়তে পড়তে আমরা গ্রামে ফিরে যাই। ঝাড়বাতির মতো পুকুরজুড়ে ফুটে থাকা কচুরিপানা ফুলের কাছে ফিরে যাই। শাপলা শালুক আর জোনাক জ্বলা সন্ধ্যার কাছে ফিরে যাই। টিনের চালে ঝুম বৃষ্টির মাতাল নৃত্য দেখি। বর্ষাকালে পুকুরের পানিতে ডুব দিয়ে বৃষ্টির সুরেলা ছন্দ শুনি। কাদার মধ্যে হুটোপুটি, লুটোপুটি, খুনসুটি আর জাম্বুরা নিয়ে বল খেলার মাতাল সময়ে ফিরে যাই। আসলেই কি ফেরা হয়? হয়, বইয়ের হৃদয়ছোঁয়া মায়াময় বর্ণনা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় শৈশবে। তাঁর বইগুলো পড়ার পর কখনও কখনও এমন হয়- অনেকক্ষণ বইটা বুকে চেপে ধরে চুপচাপ বসে থাকতে ইচ্ছে করে। বুকভরে বইয়ের মিষ্টি ঘ্রাণে শ্বাস নিতে ইচ্ছে করে। মনে হয় বুকপকেটে জোনাকিপোকা নিয়ে দেবদূত হয়ে ঘুরে বেড়াই খাল, বিল, মাঠ প্রান্তরে।

ইমরুল ইউসুফ
ঢাকা, বাংলাদেশ।
ইমেইল : imrulyousuf@gmail.com

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments