প্রশান্তিকা রিপোর্ট: আজ ১৩ নভেম্বর, প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। বাংলা সাহিত্যের দিকপাল এই পুরুষের জন্মজয়ন্তীর প্রাক্কালে গতকাল সন্ধ্যায় হুমায়ূন আহমেদ পুরস্কারে ভূষিত হলেন জনপ্রিয় আরেক কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা সাদাত হোসাইন। গতকাল বাংলা একাডেমীর আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন ও সাদাত হোসাইনকে এবছরের ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ দেয়া হয়।

হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে ২০১৫ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এর আগে শওকত আলী, হাসান আজিজুল হক, রিজিয়া পারভীন, জ্যোতিপ্রকাশ দত্তসহ বিশিষ্ট সাহিত্যিকেরা এই পুরস্কার পেয়েছেন। কথাশিল্পী রায়েয়া খাতুনের হাতে সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫ লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ এবং সাদাত হোসাইনের হাতে তাঁর উপন্যাস নি:সঙ্গ নক্ষত্র’র জন্য এক লাখ টাকার চেক,ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।
পুরস্কার প্রাপ্তির পরে দেশ ও দেশের বাইরে অগণিত পাঠক সাদাত হোসাইনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঠকের এই অভিব্যক্তিতে সাদাত হোসাইন আপ্লুত। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি প্রশান্তিকাকে জানান, ‘এই পুরস্কার অসাধারণ অনুপ্রেরণার। একজন নবীন লেখক হিসেবে এই অল্পসময়েই পাঠকের যে তুমুল ভালোবাসা পেয়েছি, তা অকল্পনীয়। সেই ভালোবাসা যেমন অনুপ্রেরণার, তেমনি এই পুরস্কারও তার সাথে এক বিশাল প্রাপ্তি। এই দুই প্রাপ্তি মিলে আমার লেখালেখির জগতকে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টায় অনুপ্রেরণা জোগাবে বলেই আমার বিশ্বাস।’ তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বিপুল সংখ্যক পাঠকের অভিনন্দনের জবাবে বলেন, “গত মার্চে আমি প্রশান্তিকা ও মুক্তমঞ্চের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়াতে। অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা ছিলো সেটি। ‘জীবনের গল্প, গল্পের জীবন’ নিয়ে সুদূর অস্ট্রেলিয়াতে পাঠকের যে আগ্রহ দেখেছি, যে ভালোবাসা পেয়েছি তা অভাবনীয়। এই পুরস্কার প্রাপ্তির পরও অস্ট্রেলিয়া থেকে অসংখ্য শুভকামনা, শুভেচ্ছা বার্তা পাচ্ছি ফেসবুকে। এই শুভেচ্ছাবার্তাগুলো বিশেষ কিছু। মনে হচ্ছে, আমার লেখাগুলো সত্যি সত্যিই ছুঁয়ে দিতে পেরেছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মন। তাদের সকলের জন্য ভালোবাসা।”

গতকালের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। এই পুরস্কারের জন্য গঠিত বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হায়দার আলী, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, উম্মাদ সম্পাদক আহসান হাবীব, হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও অন্যদিন সম্পাদক ও প্রকাশক মাজহারুল ইসলামসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বিখ্যাত কিংবদন্তী কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার বিতরণ ২০১৯ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমার সৌভাগ্য যে উনার শেষ দিনগুলোতে পাশে থাকার সুযোগ পেয়েছি। এমন মানুষের শেষ সময়ে পাশে থাকা অনেক কম লোকের ভাগ্যে জোটে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। যার জন্য তিনি আমাদের মাঝে চিরদিন বেঁচে থাকবেন।’
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন হুমায়ূন আহমেদ নন্দিত লেখক, কিন্তু কিংবদন্তী লেখক কি? আমি বলব- তারা ভুল বলেন। কারণ হুমায়ূন আহমেদ কিংবদন্তী লেখক বলেই জননন্দিত। একজন জনপ্রিয় লেখক ও উঁচুমানের লেখকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যদি লেখক উঁচুমানের না হন, তাহলে তাঁর লেখা জনপ্রিয় না হয়ে পারে না।’

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আপন সৃষ্টিশীলতায় আচ্ছন্ন রেখেছেন ৩ কোটি বাঙালিকে। তার একটা নিজস্ব কণ্ঠস্বর আছে। পড়ামাত্রই তার লেখা চেনা যায়। পরিস্থিতি নির্মাণ, বর্ণনাভঙ্গী, সংলাপে তিনি এমন এক শৈলীর উদ্ভাবন করেছেন যা বাংলাসাহিত্যে অতুলনীয়। এই পাঁচ বছরে যাঁরা এ পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন, তাঁরা এ পুরস্কারকে সম্মানিত করেছেন।’

হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্য শুধু অসংখ্য পাঠক তৈরি করেননি, পাশাপাশি তাঁর লেখা অনুপ্রাণিত করেছে অসংখ্য লেখককে। তাঁর নামাঙ্কিত এ পুরস্কার তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করবে বলে আশা করি।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অন্যদিন সম্পাদক ও স্বনামধন্য প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম।পুরস্কার গ্রহনের পর ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্য দেন রাবেয়া খাতুন ও সাদাত হোসাইন। সাদাত হোসাইনের বাবা, মা, স্ত্রী সহ পরিবারের সকলে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। পুরস্কার প্রদান শেষে অসংখ্য পাঠক ও ভক্ত সাদাত পরিবারের সকলের সঙ্গে ছবি তোলেন ও কুশল বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রবীন্দ্রসংগীত ও হুমায়ূন আহমেদের লেখার গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা করেন মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল। অনুষ্ঠানে আরও এসেছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, কবি রুবী রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা সাদাত হোসাইন এ বছরের প্রথম দিকে প্রশান্তিকা ও মাসিক মুক্তমঞ্চের আমন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া এসেছিলেন। তিনি সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে ‘জীবনের গল্প,গল্পের জীবন’ শীর্ষক সাহিত্য সভায় অংশগ্রহণ করেন। দেশ ও দেশের বাইরে তিনি সমান জনপ্রিয়। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত উপন্যাস আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম, নি:সঙ্গ নক্ষত্র ও নির্বাসন; কাব্যগ্রন্থ যেতে চাইলে যেও, আমি একদিন নিখোঁজ হবো এবং কাজল চোখের মেয়ে পাঠক নন্দিত হয়েছে। সাদাত হোসাইন প্রশান্তিকায় নিয়মিত লিখেন। তিনি প্রশান্তিকায় ‘নীল সাগরের নোনা জলে’ শীর্ষক ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী লিখছেন।