[ প্রশান্ত পারের দেশ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে চালু হয়েছে ‘প্রশান্তিকা বইঘর’ নামে একটি বাংলা বইয়ের দোকান। গত ১৬ অক্টোবর ২০২১ শনিবার থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়ায় কোন বাণিজ্যিক স্থানে এটিই প্রথম বইয়ের দোকান। বই কেনা এবং বই সংগ্রহ নিয়ে চমৎকার এই লেখাটা লিখেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক ও প্রকৌশলী মো: ইয়াকুব আলী ]
‘বই কেনা’ প্রবন্ধে সৈয়দ মুজতবা আলী বারট্রান্ড রাসেলের একটা বাণী উল্লেখ করেছিলেন – ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’ আমিও তাই মনের মধ্যে বেশি বেশি ভুবন সৃষ্টিতে মনযোগী।

পাঠ্যবইয়ের বাইরে ‘আউট বই’ পড়ার অভ্যাস অনেক পুরোনো। এই সুদূর প্রবাসে এসে সে আগ্রহটা না কমে বরং বেড়ে গিয়েছে। এখনও সময় সুযোগ পেলেই পড়তে বসি হাতে কয়েক রঙের মার্কার নিয়ে। আমার জোগাড়যন্ত্র দেখে গিন্নী ছেলেমেয়েদের বলেনঃ “তোমার বাবাকে বিরক্ত করো না, আগামীকাল তার পরীক্ষা আছে”। কিন্তু বিদেশে বাংলা বইয়ের সরাসরি কোন যোগানদাতার সাথে পরিচয় ছিলো না।
এরপর পরিচয় হলো আতিকুর রহমান শুভ ভাইয়ের সাথে। উনি তখন পর্যন্ত অনলাইনে বইয়ের অর্ডার নেন। উনার কোন একটা চালান আসলেই আমি সবার আগে উনার বাসায় যেয়ে হাজির হই। তারপর পছন্দের বইগুলো নিয়ে বলি, এইবার আপনি মার্কেটিং করেন। শুভ ভাই পাগলা ছোট ভাই হিসেবে আমাকে বরাবরই এই বাড়তি সুবিধাটুকু দেন। আমি যতবার বই নিই ততবারই বলি – ভাই আপনি তো আমার সংসার না ভেঙে ছাড়বেন না।

এরপর এখনতো উনারা দুই ভাই মিলে সিডনির ছোট্ট বাংলাদেশ খ্যাত লাকেম্বায় একটা বইয়ের দোকানই দিয়ে দিলেন। এটা একটা স্বপ্নের বাস্তবায়ন। সাত সমুদ্র তেরো নদীর এই পাশে প্রশান্ত মহাসাগরের পারে একটা আস্ত বাংলা বইয়ের দোকান। ভাবতেই আমার মনে কেমন জানি শিহরণ জাগে ! নতুন বই খুলে তার মধ্যে মুখটা ডুবিয়ে বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ। আহা কল্পনা করতেও ভালো লাগে।
পৃথিবীর বুকে মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষা করতে আমাদের মতো এতবড় ত্যাগ স্বীকারের নজির আর নেই। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রাজপথ রঞ্জিত করে সেই দাবী প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছিলো। সেই ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ এখন বিশ্বময় প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় গর্বের বিষয়।
এখন সিডনির এই বাংলা বইয়ের দোকান দেখিয়ে বিদেশী যে কাউকে আমাদের ভাষা দিবসের মাহাত্ম বুঝানো সহজ হবে বলেই আমার বিশ্বাস। প্রবাসী প্রজন্ম খুঁজে পাবে তার ফেলে আসা শৈশব কৈশোরের দুরন্ত আউট বই পড়ার দিনগুলো আর প্রবাসী দ্বিতীয় প্রজন্ম খুঁজে পাবে শেকড়ের সাথে তার বন্ধন। প্ৰশান্তিকার পথচলা অব্যাহত থাকুক। এই অধমের বই ‘অস্ট্রেলিয়ার ডায়েরি’ও পাওয়া যাচ্ছে প্ৰশান্তিকা বইঘর’এ। এটা আমার জন্য অনেক সম্মানের, আনন্দের।
মোঃ ইয়াকুব আলী
প্রকৌশলী, লেখক
প্রকাশিত বই- নদীর জীবন; অস্ট্রেলিয়ার ডায়েরি।
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।