একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশ ও জাতিকে এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে চাইলেও আপনি চোখ বুজে থাকতে পারবেন না। গতবারের নির্বাচন ছিল বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের বর্জনে একপেশে।
ফলে কেমন নির্বাচন হবে, আদৌ হবে কি না, হলে কিভাবে হবে এ নিয়ে ছিলো ব্যাপক সংশয়। একদিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠতা আর যোগ্য নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন, অন্যদিকে সরকারের কিছু মন্ত্রীর বেপরোয়া মনোভাব, কথাবার্তা দূর্নীতি ছিলো দেশজুড়ে আলোচনার বিষয়। তারপরও নির্বাচন কেমন হবে তা নিয়ে সন্দেহ যায়নি। বিরোধী দলে বি এন পি না থাকলে লড়াই জমজমাট হবেনা এই ধারণা থেকে মানুষ মনে করে নিয়েছিল হয়তো এবারও আগের মত থাকবে পরিবেশ।
হঠাৎ করে সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে দৃশ্যপটে কামাল হোসেনের আগমনের পর। একদা আওয়ামী লীগের নেতা, বঙ্গবন্ধু আমলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কামাল হোসেন সংবিধান রচনায়ও ভূমিকা রেখেছিলেন। ৯১ সালে আওয়ামী লীগের অপ্রত্যাশিত পরাজয় ও খালেদা জিয়ার জয়ের পর কামাল হোসেনের সাথে শেখ হাসিনার দ্বন্দ্ব শুরু। একসময় তিনি দল থেকে বহিস্কৃত হন। রাজনীতি নাছাড়লেও কখনোই তিনি সুবিধা করতে পারেননি। তাঁর গণফোরাম এককালের বাম নেতাদের সাথে নিয়ে নামের বহর দেখালেও কামে ছিলো ঠুঁটো জগন্নাথ। বাম নেতারা যে বয়সের ভারে ক্লান্ত আর তত্ত্ব কপচানোয় দিন পার করেন এটা তিনি বুঝলেও কিছু করতে পারেননি। এবার হঠাৎ মোচড় দিয়ে জানী দুশমন বিএনপির কোলে আশ্রয় নেয়া কামাল হোসেন হয়ে উঠলেন ঐক্য ফ্রন্টের নেতা।
বলাবাহুল্য তাঁর আগমন বি এন পি কে নতুন তাগদ দিয়েছে। নানা কারণে বি এন পি প্রায় মুছে যেতে বসেছিল। তাদের নেতা কয়েক দফার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জেলে যাবার পরও তারা কোন শো ডাউন করতে পারেনি। ধারাবাহিক আন্দোলন দূরে থাক তারা একটা মিছিলও করতে পারেনি। তাদের কলংক তারেক জিয়া বিলেতে বসে কলকাঠি নাড়লেও তাতে কোন কাজ হয়নি। দেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও শাস্তির পর জামাতও কূল হারা। তাদের শক্তি বা একতার গল্প কতটা ভিত্তি হীন সেটাও মানুষ টের পেয়েছে। জামাত বিহীন বি এন পি মূলত ক্রাচ বিহীন খোঁড়া। এই দলের হঠাৎ গতির কারণ কামাল হোসেনের আগমন। জুটে যাওয়া রব মান্না ঘরপোড়া গরু কাদের সিদ্দিকী ও আছেন সাথে।
যেটুকু উত্তেজনা তারাই তা তৈরী করেছেন। বিএনপির তৃণমূল সমর্থন আর অশিক্ষিত মানুষের ভোট পুঁজি করে জয়ের আশায় মাঠে নামা এদের বড় বাধা শেখ হাসিনা ও সংস্কৃতি। দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজের কেউই নাই তাদের সাথে। নাই ইতিহাস। নাই মুক্তিযুদ্ধ। যেসব রাগের কথা আর গণতন্ত্রের কথা বলছেন তার সাথে ভবিষ্যত বাংলাদেশের কোন যোগসূত্র দেখিনা। অরাজকতা কিংবা কথিত গণতন্ত্রের নামে যে কোন অপ পরিবর্তন হবে ভয়ের।
এবার তারা কাউকে ছাড় দেবেনা। এই দেশের একশ্রেণীর মানুষ বড় স্বার্থপর। প্রবাসেও তাদের দেখে চমকে যাই। তারা দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সবকিছু ভোগ করার পরও এরা হাসিনা বিরোধী। এ এক জটিল মনস্তত্ব। পতাকা মানি, দেশ মানি, জনক মানিনা। ইতিহাস মানি পাকিদের পরাজয় মানিনা। নিজে আধুনিক থাকবো ভোগ করবো ওপরে উদার, গোপনে জামাত ভোটে বিএনপি।
তাই এবারের নির্বাচন একদিকে যেমন ভয়ের আরেকদিকে ভরসার। ভয় এই, জয় বাংলা ও শেখ হাসিনা হেরে গেলে ভয়াবহ কোন বাস্তবতা তৈরী হওয়াটাই স্বাভাবিক। যার জেরে দেশ চলে যাবে পঞ্চাশ বছর পেছনে। যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া হবে দুঃসাধ্য। পাকিস্তানী ভাবধারার দেশ চালনার পরিনাম চাক্ষুস হলেও জনগণের একাংশ তা বুঝতে পারছেনা। অন্যদিকে এবার যদি জয় বাংলার শক্তি জয়লাভ করে তাদের জন্য এটাই হবে সুশাসন দেয়াও দূর্নীতি রোধের শেষ সুযোগ। এরপর তাদেরও আর সুযোগ দেয়া উচিৎ হবেনা।
নতুন বছরে দেশ ও জাতি নতুন কোন স্বপ্নে জাগবে না নতুন কোন আপদকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আশা করি ইতিহাসও অতীতের মত এবারও জনতা ভুল করবেনা।
অজয় দাশগুপ্ত
কবি, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
সিডনি,অস্ট্রেলিয়া।