দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপ। আগামীকাল বাংলাদেশের প্রথম খেলা দ্বীপরাজ্য তাসমানিয়ায়। হোবার্টের ব্লান্ডস্টোনস এরিনায় সাকিবদের দল মুখোমুখি হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন সহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্য থেকে অসংখ্য ক্রিকেট প্রেমিক বাঙালি এখন রয়েছেন হোবার্টে। প্রশান্তিকার ‘টি-২০ বিশ্বকাপের ডায়েরি’ আয়োজনের আজকের ডায়েরিটি লিখেছেন প্রশান্তিকার বার্তা সম্পাদক আরিফুর রহমান।

আবেগ, উত্তাপ, উম্মাদনা কোন কিছুই থেমে নেই অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী ক্রিকেট প্রেমিকদের মধ্যে। প্রথমে মনে হয়েছিল বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের সফরে ধরাসয়ী বা বাজে পারফরম্যান্স করার কারণে বাংলাদেশি ক্রিকেট প্রেমিকেরাও বুঝি চুপসে গেছে। হয়তো টি-২০ বিশ্বকাপ নিয়ে তাদের কোন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাবে না। কিন্তু বাঙ্গালি যে ক্রিকেট প্রেমিক জাতি, বাঙালি যে উম্মাদনা ছড়িয়ে দেওয়া জাতি সেটা ভুলে গেলে চলবে না। তাদের উম্মাদনা শুরু হয় যখন টি২০ বিশ্বকাপের ক্রিকেটের টিকেট ছাড়ে সেদিনই বাংলাদেশি খেলার টিকেট এক দিনের মধ্যেই নিঃশেষ করে ফেলে। খেলার সময় যত ঘনিয়ে আসে বাংলাদেশিদের মধ্যে উম্মাদনা ততই ছড়িয়ে পড়ছে। প্রবাসিরা একেকজন তো কাজের জায়গা থেকে ছুটিই নিয়ে রেখেছে। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশি জার্সি, পতাকা নিয়ে এসে দোকানে ঝুলিয়ে রেখেছে।

ক্রিকেট প্রেমিক কিংবা দেশ প্রমিকেরা সেই জার্সি পতাকা কিনে নিচ্ছে। এ যেন এক ঈদের মতো আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র অস্ট্রেলিয়ায়। সিডনিতে এখন চায়ের কাপে একটাই আলাপ- ক্রিকেট বিশ্বকাপ। প্রশান্তিকা বইঘর সেই উম্মাদনা আরো ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এসেছে জার্সি এবং বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সেই জার্সি এবং পতাকা কেনার জন্য। জার্সি কিনতে এসে প্রশান্তিকায় দেখা হয়ে যায় বেশ কিছু ক্রিকেট প্রেমিকের সঙ্গে। আরিফ ইসলাম নামে একজন ক্রিকেট প্রেমিক বলেন,
‘ আমরা খুবই এক্সাইটেড। আমাদের দেশের টাইগারদের খেলা দেখব স্টেডিয়ামে গিয়ে ভাবতেই বুক প্রশস্ত হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রীকে নিয়ে খেলা দেখতে যাব। এই জন্য জার্সি কিনতে এসেছি। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, দলের খারাপ সময় যাচ্ছে এর জন্য টেনশন বা খারাপ লাগছে না? তিনি উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে বলেন, একদম না। ইনশাল্লাহ আমরা বিশ্বকাপ আসরে ঘুরে দাঁড়াব। বড় কোন আসর হলে আমরা সবসময় ভালো খেলি। আমাদের মনস্তত্ত্ব চাঙ্গা হয়ে যায়। তাছাড়া আমরা তো গ্যালারিতে থাকবই। ইনশাল্লাহ আমরা ভালো কিছু করবই।

ক্যাম্পবেলটাউন থেকে জার্সি পতাকা সংগ্রহ করতে প্রশান্তিকায় এসেছিলেন আদর এবং ইসরাত মুনির দম্পতি। তাদের চোখে মুখে ছিল একরাশ হাসি এবং উচ্ছ্বসিত ভঙ্গি। তাদের সাথে আলাপ করে জানা যায় তাদের অনুভূতি। তারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাজে ফর্ম উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আমরা বড় বড় দলের সঙ্গে খেলব এটাই আমাদের প্রাপ্তি। এই দম্পত্তিও বাংলার টাইগার দের ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আজকের ম্যাচ দেখার জন্য শত শত বাংলাদেশী সিডনি থেকে উড়ে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সৌন্দর্যময় রাজ্য তাসমানিয়ায়। তাদের মধ্যে থাকা ফয়সাল চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে জানা যায় তারও আশার বাণী। ফয়সাল বলেন, ইনশাল্লাহ আমরা হবার্ট থেকে জিতেই সিডনিতে ফিরবো।

শনিবার অস্ট্রেলিয়ায় ছুটির দিন থাকায় আমি বাংলাদেশী কমিউনিটির বাঙালি অধ্যুষিত লাকেম্বায় ঘুরে ঘুরে বাঙালী ক্রিকেট প্রেমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি সকলেই এখন ব্যস্ত সিডনি গ্রাউন্ডে বাংলাদেশী এবং সাউথ আফ্রিকার ক্রিকেট খেলা দেখার প্রস্তুতি নিয়ে। কেউ কিনছে জার্সি, কেউ মাথায় পতাকা খচিত পতাকা এবং বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা।
আসলে এখন চলছে বাংলাদেশী সাপোর্টার দের মধ্যে দেশের ক্রিকেটের আবেগ, উম্মাদনা, জেতার আশা আর ভালোবাসা।
আমাদের টাইগারের ঘুরে দাঁড়াত, ক্রিকেটের জয় হোক।
আরিফুর রহমান
কথাসাহিত্যিক, বার্তা সম্পাদক, প্রশান্তিকা।
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।