কেমন আছি আমরা সবাই?
সবাই তো যার যার নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি সম্বন্ধে যথেষ্ট অবগত, কিন্তু আমরা কি জানি, আমাদের সন্তানেরা কেমন আছে ? আমি জানি অনেকেই ঘরে থেকে তাদের সন্তানদের অনেক সময় দিচ্ছেন। নিবিড় পারিবারিক বন্ধন স্থাপন করবার সুযোগ পেয়েছেন এবং সত্যি সত্যি সেটা অর্জনও করছেন। ফেসবুকে অনেক ছবি এবং ভিডিও দেখা যায়, পুরো পরিবার মিলে কি সুন্দর সময় কাটাচ্ছে সবাই। কিন্তু এটাই কি সারা বিশ্বের প্রত্যেকটা পরিবারের সত্যিকারের ছবি ? আমরা কি আমাদের টিন এজ বাচ্চাদের সময় দিতে পারছি? ওরা কি আমাকে কাছে ভিড়তে দিচ্ছে? কেন নয়?
বিভিন্ন বয়সের বাচ্চাদের বিভিন্ন রকমের চাহিদা থাকে। ভালোলাগা থাকে। ভালো না লাগা থাকে, আমরা কি সবটা বুঝে উঠতে পারি? না পারলে কি করি ? বিশেষ করে টিন এজ বাচ্চারা কি পারছে আমাদের সাথে সক্রিয়ভাবে সময় দিতে? নাকি ওরা হারিয়ে যাচ্ছে নিজেদের ছোট কোন গণ্ডীতে, অথবা সাথে থেকেও সত্যিকারের সাথে থাকছে না, হাসি মুখের আড়ালে সত্যিকারের সুখ নেই এমন কোন অবস্থানে !
অনুভূতিরা সত্য, অবেগ সত্য। তাই আবেগ চেপে রাখলে মানুষের সঠিক বা সুস্থ মানসিক বিকাশ ঘটে না। আমাদের শিশুরা আবেগ প্রকাশ করতে পারে না । একটা ছেলে যখন কাঁদে আমরা তাদের কাঁদতে নিষেধ করি কারণ ছেলেদের কাঁদতে নেই। একটা মেয়েকে জোরে হাসতে না করি বা শান্ত হয়ে বসে থাকতে বলি, তার ভেতরে চঞ্চলতা থাকলে তা আমরা তাকে দমন করতে শেখাই কারণ মেয়েদের নির্দিষ্ট কিছু আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় আমাদের সমাজে। তাই তারা আবেগ দমন করতে শেখে, প্রকাশ করতে নয়। একটা পর্যায়ে এসে তারা নিজের আবেগকে চিনতেই পারে না। আমাদের দেশে মানুষ মন খারাপ হওয়াটাকে অপরাধ বলেই মনে করা হয়, কখনো কখনো এটাকে রীতিমতো পাপ হিসেবে শেখানো হয়। কিন্তু মন খারাপ তো আবেগের অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা প্রতিক্রিয়া, হবেই। কিন্তু না জানার কারণে বুঝতে পারেনা মন খারাপ আসলে কি জিনিষ এবং এই ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। তাহলে এবার প্রশ্ন হলো, করোনা ভাইরাসের কারণে হোম কোয়ারান্টিনে থাকাকালীন সময়ে আমাদের সন্তানেরা কেমন আছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য কেমন?
এই সময়গুলোতে আপনারা আপনাদের সন্তানকে সেই আবেগ প্রকাশ করবার সুযোগ করে দিতে পারেন। ওদের খোলা মনে বেড়ে ওঠার সাহস দিতে পারেন আর সেটা শুরু হতে পারে ওদের যে কোনো কথা মন দিয়ে শোনা থেকে- আপনার সন্তানের অনুভূতি শুনুন। একদম ছোটবেলা থেকেই শুনুন যেন টিন এজ বয়সে এসেও ওরা আপনার কাছে আসতে পারে। ছোট বেলা থেকে করলে অভ্যাসটা থেকে যাবার একটা সম্ভাবনা রয়ে যায়। তাছাড়া একদম ছোট বেলা থেকে শুনলে আপনারাও অনেক ভালো গাইড করতে পারবেন। শুধু নিজেরটা বলেই গাইড করতে চাইলে, ওদের জ্ঞানের পরিধি খুব সীমিত হয়ে যাবে এবং ওদের ভাবনা চিন্তা অজানাই থেকে যাবে সারাজীবন। সেকারণেই শুনতে হবে। তাহলে ওরা আপনাদের পাশে পেয়ে ভালো মন্দ বিচার করতে শিখবে। এটাই কি সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষা নয়?
তাদের কোনো অনুভূতি হয়তো আপনাকে অবাক করবে, বিরক্তিকর মনে হবে কিংবা ভীত করবে, কিন্তু তবুও শুনুন। উড়িয়ে দেবেন না, বা বলবেন না “এসব ভাবার কোন দরকার নেই তোমার” অথবা “এসব ভাবনা কোথায় পেলে?” কিংবা “বোকার মতো ভাবছো কেন ? “ কারণ আপনার এইসব কথায় কিন্তু ওদের অনুভূতি পালিয়ে যাবে না । বরং দুঃখ পেয়ে ওরা সেটা লুকিয়ে রাখতে শুরু করবে। ভাবনা যখন একবার মাথায় এসেই গেছে, সেটাকে আরেকটু জেনে নেয়া ভালো যেন তার একটা প্রতিকার করা যায়। আপনারা তাদের সাথে থেকে, ভালোবেসে তাদের পথ প্রদর্শক হতে পারেন। মানুষের অনুভূতি তার হৃদয়ের খুব কাছের একটা ব্যাপার, সেটাকে দূরে ঠেলে দিলে ওরাও দূরে সরে যেতে পারে, তখন হয়তো আফসোসের সময় থাকবে না।
উদাহরণ একঃ একজন ১৪/১৫ বছরের মানুষ খুব আকুল হয়ে তার অনুভূতির কথা, কষ্টের কথা বলতে চায় । কিন্তু তাকে আমরা চুপ করে থাকতে শেখাই। কারণ সে তো খেতে পাচ্ছে, পড়তে পারছে, মাথার ওপরে ছাঁদ আছে তার কিসের এতো কষ্ট, কিসের এতো অভিযোগ ? বোঝা তো দূরের কথা, শুনতেই চাইনা, আমরা তাদের অনেক কিছু করতে দেই না পড়াশুনার ক্ষতি হবে ভেবে। বাচ্চাটা সারাক্ষণ বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রাখলে অথবা আমরা যা যা খেলা বা শিল্পকর্ম ওদের জন্য পছন্দ করবো, সেগুলো করলে আমরা খুশী। মনে করি বাচ্চাটা লক্ষ্মী । যত ঠাণ্ডা ততো ভালো, যত পড়ে ততো শান্তি।এই শান্তিটা কার? আমাদের। ওদের শান্তি কিসে ? আমরা খোঁজ নেই না ।
সে কারণে সে যখন প্রতিবাদ করে, কিংবা অন্য কোন পন্থা (রাগ, চিৎকার, মারামারি, জিনিষ পত্র ছোঁড়াছুড়ি বা ভাঙা) অবলম্বন করে প্রকাশ করতে চায় তার কষ্টের কথা, কিংবা তার সাধ আহ্লাদের কথা, আমরা তাকে বেয়াদব বলি, কিংবা বলি মিথ্যুক। ছেলেটা কথা শোনে না বা গোঁয়ার কিংবা বেয়ারা হয়ে গেছে। কিন্তু বাসায় অনেক কিছুর পারমিশন নেই বলে তারা কিন্তু মিথ্যের আশ্রয় নিতে পারে এবং গোপন কাজের সাহস বাড়তে পারে। পড়ার টেবিলে বসে থাকা আমাদের সন্তান কি আসলে পড়ছে? নাকি লুকিয়ে অন্য কিছু করছে কিংবা কিছু করতে না পারার যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে একজন অসুখী মানুষে পরিণত হচ্ছে। তখন ওরা লুকিয়ে কিছু করলে ভুলটা কিন্তু ওদের হবে না , আমাদেরও সেই দায় নিতে হবে।
এই ঘরে থাকাকালীন সময়টাতে আমরা ওদের কথা শুনতে পারি। ওরা অবশ্যই পড়াশুনা করবে, কিন্তু আবার খেলাধুলাও করবে , বয়সটাই তো এমন। হয়তো খুব অন্যায় আবদার করবে, অসম্ভব কিছু চেয়ে বসবে , আমরা সাধারণত তখন ওদের কি বলি ? শোনার সাথে সাথেই কি না করে দেই ? নাকি একটা সমঝোতায় আসি? যেমন, ২ ঘণ্টা পড়ার পর ৩০ মিনিট খেলতে পারবে অথবা যেটা করতে মন চায় সেটা করতে পারবে।
যদি দেখেন পড়াশুনায় মনযোগ নেই, তার কারণ আসলে মন দিতেই পারছে না। কেন ? সেটা খুঁজে বের করা খুব জরুরী। সেও পড়তে চায়, ভালো রেজাল্ট করতে চায় কিন্তু মন বসাতে পারছে না অর্থাৎ কিছু একটা ব্যাপার তার মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে, সেটা কি?
নিজের কথা ভাবুন, আমরা কি চাইলেই যে কোন কাজে যে কোন সময় মন দিতে পারি? কোন একটা ভাবনা যখন আমাদেরকে খুব প্রভাবিত করে আমরা কি স্বাভাবিক কাজকর্মে মন দিতে পারি? পারিনা। এমনটা ভাবা একদমই ঠিক হবে না যে ওরা ছোট মানুষ , ওদের আবার এতো কিসের ভাবনা? ৩/৪ বছর বয়স থেকেই ওরা পারিপার্শ্বিকতা বুঝতে পারে, ওদেরও উৎকণ্ঠা কিংবা ট্রমা হতে পারে । যদি সেটার দিকে মনোযোগ না দেন, চিকিৎসা না করান তাহলে তা সারাজীবনই সাথে থাকতে পারে।
মাঝে মাঝে ওদের সব রকমের চাহিদা পূরণে আপনার নার্ভের ওপরে অনেক চাপ লাগতে পারে, তবুও ওদের গড়ে তোলা তো আপনারই দায়িত্ব তাই কাজটা করতে হবে। তবে আপনিও ব্রেক নেবেন মাঝে মাঝে। আপনারও মানসিক শান্তির প্রয়োজন আছে, তাতে কোন দ্বিমত নেই, নিজের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। দরকার হলে আপনিও কাউন্সেলিং সেশনে যান, মানসিক সুস্থতা খুব জরুরী, নিজের জন্য এবং পরিবার বা সন্তানের জন্য।
উদাহরন দুইঃ ২৬/২৭ বছরের খুব ভদ্র একটি ছেলে। পড়াশুনা শেষ করে ভালো চাকরী করছে । পরিবারের সবাই তার আচার ব্যবহারে অত্যন্ত খুশী। কখনো রাগ হয়না, ধর্ম কর্ম করে, মুরুব্বীদের সম্মান করে, আমাদের সমাজের দৃষ্টিতে একদম বিশুদ্ধ একজন মানুষ।
সমস্যা হলো, এই ছেলেটির আজকাল দম বন্ধ লাগে। কিসে যে অশান্তি ঠিক বুঝতে পারে না তবে খুব অস্থির লাগে। মাঝে মাঝে বুক ধড়ফড় করে, নিশ্বাস আঁটকে আসতে চায়। আজকাল রাতে ভালো ঘুমাতেও পারে না। পরিবারে গান করার পারমিশন নেই কিন্তু ওর গান গাইতে খুব ভালো লাগে। বাইরে বন্ধুদের সাথে গান করতে করতে ওর বেশ নাম হয়েছে। মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানেও ডাকে। ও বাসায় এ কথা বলতে পারে না কিন্তু গান গাইলে ওর মধ্যে একটা তৃপ্তি আসে। তখন নিজেকে নিজের মতো লাগে। কিন্তু বাড়িতে একথা লুকোতে হয় বলে নিজেকে অপরাধী লাগে। কোন মানুষ তার পরিবারের কাছে নিজের পরিচয় গোপন করে বাঁচতে চায়না, উল্টো তার সব সুখে তাদের পাশে চায়।
যুবক ধীরে ধীরে লক্ষ্য করে, ওর ভেতরে রাগের অনুভূতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চায়, কিন্তু সেটা সে কখনো প্রকাশ করে নি বলে কেউ জানে না । সবাই জানে ও খুব ঠাণ্ডা মানুষ। রাগ জমতে জমতে ওর বুকের ভেতরে শক্ত পাথর হয়ে গেছে, ও সেটার আকার অনুভব করতে পারে আর তখন বুকের ভেতরে খুব ভার লাগে। আজকাল অন্যের ভালো দেখলে কেমন করে যেন সাথে সাথে নিজের কথা মনে হয়। ভাবে “ আমি কেন এমন পারি না ? অথবা “ আমি তো এর চেয়ে ভালো পারি “। প্রতিযোগিতা এবং হিংসা ওর শান্তি কেড়ে নেয়। এই সব অনুভূতিগুলো যে ভেতরে আদৌ ছিল এটা সে কোনদিন ভেবে দেখেনি কিন্তু আজকাল বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। সবার চোখে ভালো থাকার একটা লোভ ছোটবেলা থেকেই মাথায় ঢুকে গেছে। তাই সবার চোখে খারাপ হবে এমনটা ভাবার দুঃসাহসও ওর নেই ।
দুজন মানুষের গল্প পড়লে বোঝা যায়, একজন অনুভূতি প্রকাশের কারণে সবার চক্ষুশূল হয়েছে আরেকজন অনুভূতি চেপে রেখে মানুষের চোখে তাদের প্রিয়পাত্র হতে যেয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। এদের দুজনের কেউই সুখী নয়। একজন প্রতিবাদ করে মানুষের চোখে খারাপ হওয়ার কারণে কোনদিন সুখ খুঁজে নিতে পারে নি। আরেকজন তার অনুভূতি বুকের অনেক গভীরে চেপে রাখতে রাখতে নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছে।
এদের কিভাবে সাহায্য করবো আমরা ?
বাবা মায়েদের বলি, এই সময়টাকে কাজে লাগান । এতো কাছে থেকে, এতো লম্বা সময় নিয়ে ওদের প্রতিপালন বা শিক্ষাদান করবার সময় সুযোগ এসেছে, সেটা যেন বৃথা না যায়। মনে রাখতে হবে ওরাও স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ওরা হয়তো তা প্রকাশ করতে পারছে না। লক্ষ্য করুন বাচ্চার ব্যাবহারে কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা ! প্যাটার্ন গুলো লক্ষ্য করুন। আপনি সারাক্ষণ হা হুতাশ করলে বা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলে বাচ্চারাও কিন্তু সেটাই শিখবে। করোনা ভাইরাস নিয়ে ওদের ভেতরে যেন কোন অপরাধবোধ তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। সতর্ক করবেন কিন্তু ভয় দেখাবেন না।
এর চেয়ে বরং ওদের মধ্যে এখন অন্যের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করা যেতে পারে। অন্যের দুঃখ কষ্ট বুঝতে চেষ্টা করা, বাইরে কাজ করা সাহসী মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা বোধ তৈরি করা ।
• অন্যকে সাহায্য করাঃ ওদেরকে জিজ্ঞেস করেই সিদ্ধান্ত নিন অন্য মানুষকে কিভাবে সাহায্য করা যায়, যেন ওদের মধ্যে সেই দায়িত্ববোধটা তৈরি হয়। যেমন, বাড়িতে সাহায্যকারী মানুষটিকে সাহায্য করা ।
• মানবিক গুণাবলীঃ আপনার সন্তানেরা সবসময় পড়াশুনার পেছনে ছুটছে, নাহলে ঠিক মতো খেলো কিনা, ঘুমালো কিনা ইত্যাদি নানা ধরণের নিয়ম কানুনে বাঁধা ওদের জীবন। এই সময়টাতে ওদের মানবিক গুণাবলী শেখাতে পারেন ।
• কগ্নিটিভ ডেভেলপমেন্টঃ জগত সংসার সম্বন্ধে ওদের ধারণা কেমন? পৃথিবী সম্বন্ধে ওদের উপলব্ধি কি? কি জানে বা কতটুকু বোঝে কিংবা কতটূকু গ্রাহ্য করে খোঁজ নিন ।
• নৈতিকতাঃ এই মুহূর্তে নৈতিক বা মরাল জগতটাকে আলোকিত করতে পারেন। চারিদিকে কতো মানুষের অভাব, চাকরী চলে যাচ্ছে ,মানুষ খেতে পারছে না, এই ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব কি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে তারা কি অবদান রাখতে পারে? প্রথমেই বলে দেবেন না, আগে জিজ্ঞেস করুন, তারপর আপনি তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, আপনার আইডিয়া যোগ করুন।
• আবেগ প্রকাশঃ আপনার সন্তানদের আবেগ প্রকাশে বাঁধা না দিয়ে এই সময়টা হোক আপনার সন্তানের অনুভূতির গভীরে যাবার অভিযান। প্রত্যেকটা অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গাইড করতে পারেন।
• চিঠি লেখাঃ আমরা ছোট বেলায় চিঠি লিখতাম, তাতে করে মনের অনেক ভাব প্রকাশ করবার একটা সুযোগ ছিল। ওরা চিঠি লিখতে পারে ডাক্তার নার্স কিংবা পুলিশ বা বাসার সাহায্যকারীর কাছে। তাদের সাহসিকতাকে অভিনন্দন জানিয়ে, কিংবা কারো প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে, এখান থেকে ওরা অনেক কিছু অর্জন করতে পারবে যা সারাজীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে। এই থেকে আবেগ, নৈতিকতা এবং কগ্নিটিভ সবকিছুরই পরিবর্তন আসতে পারে। তাদের চারিত্রিক বিশিষ্টই পাল্টে যেতে পারে এই অনুশীলনের মাধ্যমে।
• খাপ খাইয়ে নেয়াঃ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াটা একটা বিশাল শিক্ষা। সব বাবা মা চায় বাচ্চারা যেন মোবাইল, গ্যাজেট বা টিভির ওপর থেকে তাদের নেশা ভুলে যায়, সেটা ঠিক আছে কিন্তু এই সময়টাকে অস্বীকার করবার উপায় নেই, তাই একদম ছেড়ে দেয়াও হয়তো সম্ভব নয়, আপনি বরং একটা সময় বেঁধে দিন।
• এক্সারসাইজঃ খেয়াল রাখতে হবে ঘরে বসে থেকে, চলা ফেরা কম করার কারণে ওদের মধ্যে যেন ওবেসিটি ডেভেলপ না করে। ২ ঘণ্টা পর পর ১০ মিনিটের স্ট্রেচিং বা ব্যায়াম সাহায্য করবে। সুখবর হলো ওরা এখন বাইরের ফাস্ট ফুড খাচ্ছে না, ঘরে তৈরি সুষম খাবার খেয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারবে।
• প্রতিদিনের রুটিন: পড়াশুনার বাইরে ৩০মিনিট গল্পের বই পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন ।
আসুন আমাদের সন্তানদের মানসিক সুস্থতার প্রতি মনোযোগ দেই। মন ভালো থাকলে ওদের শরীরও ভালো থাকবে এবং তখন ওরা অনেককিছু এমনিতেই অর্জন পারবে।
শিল্পী রহমান: গল্পকার, কবি, সংস্কৃতিকর্মী, কাউন্সেলর ও গবেষক। স্থায়ী নিবাস ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়ায়। কর্মসূত্রে রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে। প্রকাশিত গ্রন্থসমুহ: ধর্ষণ ধর্ষক ও প্রতিকার; উৎকণ্ঠাহীন নতুন জীবন; মনের ওজন; সম্ভাবনার প্রতিচ্ছায়ায়; যুদ্ধ শেষে যুদ্ধের গল্প; পথের অপেক্ষা; পাহাড় হবো ইত্যাদি।